বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি গণতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি আন্দোলনে সফল হয়েছেন। আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রাণ। তিনি সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে তিন তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮১ সালের ৩০ মে সামরিক বাহিনীর কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর আহ্বানে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি আবদুস সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়। ১৯৮৩ সালের বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
বেগম খালেদা জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সাতদলীয় জোটের মাধ্যমে এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। একই সময় তাঁর নেতৃত্বে ৭ দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল ও পাঁচদলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে।
১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া এরশাদ হটাও এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। পুনরায় শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি। সেই নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সব কটিতেই জয়লাভ করেন। ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তাঁর সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সপদে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন।
৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাস হয়। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেওয়ার পর থেকে মোট পাঁচবার তিনি গ্রেপ্তার হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হন। এরপর ১৯৮৪ সালের ৩ মে দ্বিতীয়বার, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তৃতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার হন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে দুই পুত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি হাই কোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন।
সবশেষ ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। ওই দিনই তাঁকে আদালতের পাশে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিত্যক্ত ওই কারাগারে একমাত্র বন্দি ছিলেন তিনি। কোনো অপরাধ না করেও শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বছরের পর বছর তাঁকে কারাবন্দি থাকতে হয়।
শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে। তাঁর দুই পুত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। তাঁদের নির্যাতনে আরাফাত রহমানের অকালমৃত্যু হয়েছে। তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে আপসহীন নেত্রী, তিনি বারবার সেই বিষয়টির প্রমাণ দিয়েছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কারণে তিনি আজীবন বাংলাদেশের জনগণের মাথার মুকুট হয়ে থাকবেন।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য