লায়লা খালিদ ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামের একজন নেত্রী। সে দেশের মুক্তিসংগ্রামে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে ১৯৬৯ সালের ২৯ আগস্ট তিনি ইতালির রাজধানী রোমে যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করেন। এ ঘটনার দুই বছর তিন মাস পাঁচ দিন পর ফ্রান্সে হাইজ্যাক হয় পিআইএর একটি বিমান। হাইজ্যাককারীর দাবি ছিল একটাই- বাংলাদেশের বিপন্ন মানুষের জন্য ২০ টন ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও খাদ্য দিতে হবে। নইলে উড়িয়ে দেওয়া হবে হাইজ্যাক করা বিমান। ১৯৭১ সালে বিশ্ব ছিল দুই শিবিরে বিভক্ত। একদিকে আমেরিকাসহ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো। এর বাইরে ছিল জোট নিরপেক্ষ বিভিন্ন দেশ। সংখ্যায় বেশি হলেও সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে যারা ছিল পিছিয়ে। পাকিস্তানের শাসকরা ঐতিহ্যগতভাবে ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সেবাদাস। ইসরায়েলের মতো পাকিস্তানকেও যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে ভাবা হতো। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলেও শাসকগোষ্ঠী ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। অন্য পশ্চিমা দেশের শাসকরা জনসমর্থন হারানোর ভয়ে পাকিস্তানের পক্ষ না নিলেও বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন থেকে বিরত থাকে। ফ্রান্সের ভূমিকাও ছিল অভিন্ন।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরদের হাতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ধর্ষিত হয়েছে হাজার হাজার নারী। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যা, জ্বালাওপোড়াও, নির্যাতন থেকে বাঁচতে এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। শরণার্থী শিবিরগুলোতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় হাজার হাজার মানুষ। যাদের বেশির ভাগই শিশু। এ তথ্য সভ্য দুনিয়ার বিবেকবান মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারণ মানুষ। তবে সে সহায়তা ছিল চাহিদার তুলনায় নগণ্য। ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর অভাবে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মরছে, এ খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন এক ফরাসি তরুণ। তিনি বিমান হাইজ্যাকের সিদ্ধান্ত নেন। হাইজ্যাক করা বিমানের বদলে অসহায় মানুষদের জন্য চান মেডিকাল যন্ত্রপাতিসহ ২০ টন ওষুধ ও খাদ্য সাহায্য। অবিস্মরণীয় ঘটনাটি ঘটেছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে। ফ্রান্সে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস বা পিআইএর ৭২০বি উড়োজাহাজে যাত্রীবেশে ওঠেন ৩৮ বছরের ফরাসি তরুণ। নাম তাঁর জ্যাঁ কুয়ের। একপর্যায়ে যাত্রীবাহী বিমানের ককপিটে ঢোকেন। যুবকটি পাইলট আর কো-পাইলটকে বলেন বিমানটি ছিনতাই হয়েছে। জ্যাঁ কুয়েরের বুকে বাঁধা ছিল একটি ব্যাগ। পাইলট ও কো-পাইলটকে সেই ব্যাগ দেখিয়ে যুবক বলেন, এটি একটি শক্তিশালী টাইমবোমা। তাঁর দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য ২০ টন ওষুধ ও খাদ্য না পাঠালে যাত্রীসহ পুরো বিমান ধ্বংস করা হবে।
জ্যাঁ কুয়ের বিমানটি দখলে নেওয়ার পর ফরাসি কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করে, তাঁর দাবি মেনে নেওয়া হবে। তারপর রেডক্রসের কর্মী এবং উড়োজাহাজের টেকনিশিয়ান পরিচয়ে ছদ্মবেশী প্রশিক্ষিত দুইজন কমান্ডো বিমানে ঢুকে পড়েন। তাঁরা কৌশলে জ্যাঁ কুয়েরকে নিচে নামিয়ে আনেন। বিমান হাইজ্যাকের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। ফরাসি যুবকের বুকে লেপটে থাকা ব্যাগে বোমার বদলে পাওয়া যায় একটি বাইবেল ও দুটি ডিকশনারি। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন, জ্যাঁ কুয়ের অপরাধী নন বরং মানবতার ফেরিওয়ালা। তবে বিমান হাইজ্যাক যেহেতু গুরুতর অপরাধ, সেহেতু ফ্রান্সের আইন অনুযায়ী তাঁর বিচার হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রত্যেকে সাক্ষ্য দেন, জ্যাঁ কুয়ের যা করেছেন তা মানবতার জন্য। কারও ক্ষতির ইচ্ছা ছিল না, তেমন কোনো চেষ্টাও তিনি করেননি।
তারপরও আইন তাঁকে ছাড়েনি। ফরাসি আদালত সে দেশের আইন অনুযায়ী তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ড দিলেও কুয়েরের দাবি অনুযায়ী ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের বিপন্ন মানুষের জন্য ২০ টন মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠায়। বাংলাদেশপ্রেমী ফরাসি যুবকের জন্য সেটি ছিল এক বিরাট অর্জন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। ৩ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে পাকিস্তানি দখলদারদের পাশবিক নির্যাতনে। দুনিয়ার সব বিবেকবান মানুষ সেদিন দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের পাশে। জ্যাঁ কুয়েরের মতো অনেক বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা আত্মত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের জন্য।
দুই.
মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের বিপন্ন মানবতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে বিশ্বখ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসনের অবদান অসামান্য।
১৯৭১ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে থাকার সময় তিনি তাঁর বন্ধু ভারতীয় সংগীতজ্ঞ রবি শঙ্করের কাছ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অভিহিত হন। রবি শঙ্করের অনুপ্রেরণায় ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের বিপদাপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন। এতে জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, শিয়ন রাসেল, ব্যাড ফিঙ্গার, রিঙ্গে স্টারসহ অনেকে অংশ নেন। কানসার্ট থেকে আয় করা অর্থের ২ লাখ ৪৩ হাজার ডলার ত্রাণ হিসেবে ইউনিসেফকে দেওয়া হয়। স্মর্তব্য কনসার্টে জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানটি জনপ্রিয়তার দিক থেকে চমক সৃষ্টি করে। এ গান তাঁকে অরমত্ব দান করে বললেও অত্যুক্তি হবে না।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ববাসীর সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গের লেখা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতা। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে এই মার্কিন কবি ভারতের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান। কলকাতার কবি-সাহিত্যিকদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে অ্যালেন গিন্সবার্গের বন্ধুত্ব ছিল আগে থেকেই। যাঁদের মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন অন্যতম। তিনি তাঁর বাড়িতে ওঠেন। সময়টা ছিল বর্ষাকাল। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সংযোগকারী যশোর রোড ছিল পানিমগ্ন। সড়কপথে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় নৌকায় করে বনগাঁ হয়ে তিনি বাংলাদেশের যশোর সীমান্তে পৌঁছান। যশোর রোডের দুই পাশের শরণার্থী শিবিরগুলোর মানবেতর পরিবেশ দেখে তিনি ব্যথিত হন। শরণার্থীদের দুরবস্থা দেখে তাঁর মন কেঁদে ওঠে। জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক এই অভিজ্ঞতা থেকেই গিন্সবার্গ লেখেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতাটি। এটি তিনি পরে গানে রূপান্তর করেন।
কবিতা লিখেই ক্ষান্ত হননি মানবতার ফেরিওয়ালা অ্যালেন গিন্সবার্গ। দেশে ফিরে তিনি তাঁর বন্ধু বব ডিলান ও অন্যান্য বিশ্বখ্যাত গায়ককে নিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে কনসার্ট করেন। স্বাধীনতার পর সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কবিতার বাংলায় অনুবাদ করেন কবি খান মোহাম্মদ ফারাবী। ‘যশোর রোড’ নামের সে কবিতাটি গান হিসেবে গেয়েছেন মৌসুমী ভৌমিক। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ তাঁর চলচ্চিত্রে এটি গান হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সে গানের প্রথম কটি লাইন হলো-
শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত মানুষের দল,/ যশোর রোডের দুধারে বসত বাঁশের ছাউনি কাদামাটি জল।/ কাদামাটি মাখা মানুষের দল, গাদাগাদি করে আকাশটা দেখে,/ আকাশে বসত মরা ঈশ্বর, নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে।/ ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘর বাড়ি দেশ,/ মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালরাত কবে হবে শেষ।
তিন.
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তান বাহিনীর দখলদারত্ব ছিল নগর শহর বন্দর এলাকায় সীমাবদ্ধ। বেশির ভাগ গ্রাম ছিল মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। নভেম্বরেই পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। যৌথ কমান্ডের নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। একাত্তরের ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতে বিমান হামলা চালায়। এর এক দিন পর ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। স্বীকৃতি দেওয়ার পর বাংলাদেশের পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলা চালানো হয়। মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে ২৩০ বার বিমান হামলা চালিয়ে তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলে। ধ্বংস হয়ে যায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সব যুদ্ধবিমান।
টাঙ্গাইলে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্য নামানো হয় বিমান থেকে প্যারাশুটে করে। ডিসেম্বরের আগেই পাকিস্তানিদের অবস্থান রাজধানী ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম নগরীতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। মিত্রবাহিনীর কৌশল ছিল রাজধানী ঢাকা দখল করে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করা। তারা এজন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়। লে. জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান বাহিনী বুঝে যায়, আত্মসমর্পণ না করলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। তারা ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণে রাজি হয়। সিদ্ধান্ত হয় ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করবে পাকিস্তানি বাহিনী। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তারা মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে মেজর জেনারেল জামশেদ গুলজার কিয়ানিকে পাঠায়।
১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা। সেদিন রাজধানী ঢাকা ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। শহরজুড়ে জারি ছিল কারফিউ। রাস্তাঘাট জনশূন্য। ঠিক সেই মুহূর্তে যৌথ বাহিনীর ঘাঁটি থেকে দুটি গাড়ি ছুটে যাচ্ছে পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের হেড কোয়ার্টারের দিকে। দুটি গাড়ির প্রথমটা জিপ। যেটিতে আছেন মেজর জেনারেল জামশেদ। দ্বিতীয়টায় পতাকা ওড়ানো স্টাফ কার। যে কারে আছেন ভারতীয় বাহিনীর মেজর জেনারেল নাগরা ও কাদেরিয়া বাহিনীর অধিনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী অপেক্ষা করছিলেন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর আলোচকদের জন্য। জেনারেল নাগরা ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তাঁর ঘরে ঢোকার মাধ্যমে সেই প্রতীক্ষার অবসান হয়। নিয়াজী জেনারেল নাগরাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। তাঁর কাঁধে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘রাওয়ালপিন্ডির বাস্টার্ডরা আমার আজকের এই পরিণতির জন্য দায়ী।’
নিয়াজী একটু আত্মস্থ হতেই জেনারেল নাগরা তাঁর পাশে দাঁড়ানো মানুষটির সঙ্গে নিয়াজীকে পরিচয় করিয়ে দেন। বলেন, ইনি টাইগার সিদ্দিকী। জেনারেল নিয়াজী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন, কাদেরিয়া বাহিনীর তরুণ অধিনায়কের দিকে। পাকিস্তানি জেনারেলের সংবিৎ ফিরে পেতে কিছুটা সময় লাগল। একসময় নিয়াজী করমর্দনের জন্য হাত বাড়ান কাদের সিদ্দিকীর দিকে। বঙ্গবীর হাত এগিয়ে দিলেন না পাকিস্তানি সেনাপতির দিকে। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, নারী এবং শিশু হত্যাকারীদের সঙ্গে তিনি করমর্দন করেন না। নিয়াজীর জন্য অপমানজনক হওয়া সত্ত্বেও তিনি চুপ থাকলেন। তাঁর করার কিছুই ছিল না। দুই পক্ষের বৈঠকে নিয়াজী আপত্তি জানালেও সিদ্ধান্ত হয়, ওই দিনই রেসকোর্স ময়দানে প্রকাশ্যে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে মিত্রবাহিনীর কাছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে যৌথ বাহিনীর কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে। এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এয়ার কমান্ডার একে খন্দকার। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর কোনো বাহিনীর এত বেশি সৈন্য প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি।
আত্মসমর্পণ দলিলের মোদ্দা কথা
পূর্ব রণাঙ্গনে ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সব সশস্ত্র বাহিনী আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীসহ সব আধাসামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে।
লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধাসামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।
লেখক : সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইমেইল : sumonpalit@gmail.com