বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ে নতুন জোট গঠিত হয়েছে। এ জোট নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর তাদের যৌথ প্রার্থী তালিকা সমন্বয় করবে। জোটের নেতারা জানিয়েছেন, তিন দলের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলেও চূড়ান্ত তালিকা জোটগত আলোচনা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া জোটে আরও কিছু রাজনৈতিক দল যুক্ত হতে পারে। এতে জোটের পরিধি বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবি পার্টি প্রার্থী তালিকা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে। এনসিপিও ঘোষণা করবে। আমাদেরও তালিকা প্রস্তুত আছে। যে কোনো সময় ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর আমরা জোটগতভাবে বসে চূড়ান্ত প্রার্থী সমন্বয় করে নেব। অর্থাৎ প্রতি আসনে জোটের একক প্রার্থী থাকবে।’ জানা গেছে, নতুন রাজনৈতিক এ জোটটি সম্প্রতি রাজনীতির অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারলে বিভিন্ন পর্যায়ে গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠন, প্রশাসনিক সংস্কার এবং রাজনৈতিক পরিবেশে ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে জোটগত একক প্রার্থী তালিকা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, প্রতিটি আসনে জোটভুক্ত দলের শক্তি, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে সমন্বিত প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে। তার আগে তিন দলই প্রার্থী ঘোষণা করবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও কোন আসনে কাকে প্রার্থী করা হবে তা শেষ সময়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা সবে জোটটি গঠন করেছি। প্রতিটি দলই প্রার্থী ঘোষণা করবে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আমরা জোটগতভাবে প্রার্থী দেব। যে প্রার্থীর মাধ্যমে নির্বাচনি ফল পক্ষে আসা সম্ভব, এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় তাদের শেষ মুহূর্তে একক প্রার্থী রাখা হবে।’ এদিকে এবি পার্টি, এনসিপি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছাড়াও এ জোটে আরও কিছু দল যুক্ত হতে পারে। এ সপ্তাহে না হলেও আগামী সপ্তাহে এ জোটের পরিধি বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘আমাদের আরও কিছু দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। ঐকমত্যে পৌঁছালে জোটের পরিধি বাড়বে।’ তাঁর ভাষায়, চলমান আলোচনাগুলো ইতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে এবং জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’ জোটের নেতারা মনে করছেন, তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে পরিবর্তন আসবে, তার ওপর ভিত্তি করেই জোটের পরবর্তী কৌশল নির্ধারিত হবে। তফসিল ঘোষণার আগেই দলগুলো নিজস্ব পর্যায়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাইছে, যাতে পরে দ্রুত সমন্বয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা যায়। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে বিরোধী রাজনীতিতে নতুন এ সমন্বিত জোট আগামী নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত যদি আরও কয়েকটি ছোট বা মাঝারি দল এতে যুক্ত হয়, তাহলে জোটটি নির্বাচনি মাঠে তৃতীয় শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে জোটের টেকসই ঐক্য, আদর্শগত সামঞ্জস্য এবং প্রার্থী বণ্টনে সমঝোতা সবই চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবে তাদের ভবিষ্যৎ অবস্থান।
নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা ঘিরে যখন রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তেজনায় ভরপুর, তখন নতুন জোটটির কার্যক্রম এবং তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন রাজনীতি পর্যবেক্ষক ও সাধারণ ভোটাররা।