আগামী নির্বাচনের জন্য দুই দফায় বিএনপি ২৭২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একসঙ্গে আওয়ামীবিরোধী আন্দোলন যাঁরা করেছেন তাঁদের সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শরিকদের আসন চূড়ান্ত না হওয়ায় তাঁদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তবে ফাঁকা ২৮টি আসন থেকে অন্তত ২০টিতে শরিকদের ছাড় দেওয়ার বিষয়ে মোটামুটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহেই শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এদিকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ শরিক দলগুলো মনোনয়নের বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চায়। সেজন্য মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে আজ বিকালে তাঁদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা তাদের সমর্থন দেব। তারা যেসব আসনে প্রার্থী দেবে, সেখানে আমরা প্রার্থী দেব না। আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত হবে।’
জানা যায়, বিএনপি ঘোষিত সর্বশেষ ৩৬ আসনের মনোনয়নের তালিকায় দীর্ঘদিনের মিত্র অন্তত পাঁচজনের জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। তবে জোট শরিকদের জন্য আসন ছাড়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি দলটি। ভোটের মাঠে বিরোধী দলের প্রার্থীদের চেয়ে প্রচারে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন শরিক নেতারা। তাঁদের মতে, দ্রুত আসন সমঝোতা না হলে শরিকদের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব বাড়তে পারে। এতে ভবিষ্যৎ রাজনীতি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে দ্রুত আসন সমঝোতার দাবি তুলেছেন সমমনা দলের নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছর ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’ পতনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছেন। অথচ তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় না বসেই বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বিএনপির ২৮টি আসন ফাঁকা আসনের মধ্যে অন্তত ২০টিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে দেওয়া হতে পারে। বাকি আসনে নির্বাচনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফাঁকা আসনের মধ্যে কয়েকটি নিয়ে বিরোধও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহেই শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এদিকে আজ বিকালে পাঁচদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারা মাহমুদুর রহমান মান্নার দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করবেন। ১২-দলীয় জোটের শীর্ষনেতা জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন জানান, শরিক দলগুলো আজ বিকালে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে বৈঠকে মিলিত হবেন। তিনি বলেন, ‘আসন সমঝোতার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা বলার জন্য আমরা তাদের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। দায়িত্বশীলরা আমাদের সময় দিচ্ছেন না। এই অবস্থায় আমাদের করণীয় নির্ধারণ করতেই বৈঠকে মিলিত হব।’
এদিকে আলোচনা না করেই মিত্র দল-জোটের কয়েকজন শীর্ষনেতার আসনে বিএনপি দলীয় ‘সম্ভাব্য’ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দলটির ১৮ বছরের পুরোনো মিত্র লেবার পার্টি। ক্ষোভ ঝেড়েছে নাগরিক ঐক্য ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এ ছাড়া আসন না পেয়ে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ বিএনপির মিত্র জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ ছেড়েছে আগেই।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম