সংগীত জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি সৈয়দ আবদুল হাদী। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিসেনাদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করেছিল তাঁর গাওয়া কালজয়ী দেশের অনেক গান। বিজয়ের এ মাসে তাঁর নানা অজানা কথা তুলে ধরেছেন- পান্থ আফজাল
বিজয়ের মাস চলছে। মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা জানতে চাই...
মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলো সারা দেশের মানুষের জন্য ছিল অনিশ্চয়তার, শঙ্কার। সেই সময়গুলো এখনো দুঃসহ স্মৃতি। আমি তখন বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এর মধ্যে আবার আলতাফ ভাই ধরা পড়ে গেলেন। বলার অনেক কিছুই আছে। এসব নিয়ে তো অনেক বই লিখলেও শেষ হবে না। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে মেশিনগান ফিট করা থাকত। সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্চ করা হতো। সে ভয়াল সময়ের কথা এখনো মনে পড়ে।
এমন কোনো ঘটনা আছে যা এখনো শিহরিত করে?
আমার এক বন্ধু ছিল। তার ওপর সেই সময় হুলিয়া জারি হলো। আমি আমার বন্ধুকে সেই সময় আমার বাড়িতে লুকিয়ে রাখলাম। আমার বাসা সার্চ হলো। তবে ভাগ্য ভালো ছিল, সে তখন ধরা পড়েনি। ওই সময় রাস্তায় বের হলেই সার্চ করা হতো। ভয়াবহ সেই অবস্থা। এখনো মনে পড়লে গা থমথম করে ওঠে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনার সম্পৃক্ততা...
সারা দেশের শিল্পীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গান করতাম। বিভিন্ন বিপ্লবী ও প্রেরণামূলক গান করে আমরা দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতাম।
সেই সময় নিজের লেখা ও সুর করা গানও তো করেছিলেন...
হুম। অন্যান্য গানের সঙ্গে নিজের লেখা ও সুর করা গানও করেছি। অনেক গান সেই সময় রেকর্ড ছিল না। সেই রকম ব্যবস্থাও ছিল না। এখন সেসব গান পাওয়াও যাবে না। এসব গান সেই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগাত। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা সুর করতাম, লিখতাম। আমাদের সঙ্গে আলতাফ ভাই, খান আতা ভাই ছিল। বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের সবাই ছিল। সেই সময় সবার মনে ও ধ্যানে এক মন্ত্র ছিল-‘দেশ’।
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস কি আমরা ঠিকমতো তুলে ধরতে পারছি?
সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে গেলে একেবারে নির্মোহভাবে করতে হয়। আমরা তা এখনো পারিনি। অনেক পরিতাপের বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে একেকজন একেক কথা বলে। রাজনৈতিকভাবেই আমরা এটা করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সন্দেহ, বিভাজন, বিতর্ক থাকা ঠিক নয়।
জীবনের এ পর্যায়ে এসে কখনো কি প্রাপ্তিযোগ্য নিয়ে ভেবেছেন?
স্বাধীনতা অর্জন আমাদের বড় প্রাপ্তি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি কিছু আছে? তবে ওই যে বললাম, স্বাধীনতার এত দিন পরেও আমরা বিভাজন কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এত বিভাজন ঠিক নয়। আমার তো মনে হয় না, অন্য কোনো দেশে এই রকম বিভাজন আছে! স্বাধীনতার এত দিন পরও আমরা ইতিহাস নিয়ে সন্দেহের মধ্যে আছি।
নতুন প্রজন্মের জন্য আপনাদের আরও কিছু করার ছিল বলে মনে হয়?
সেটা ঠিক, আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য অনেক কিছুই করতে পারিনি। এটা আমাদের দায়। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার অর্জন এবং এর সাফল্য নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারিনি। আরও বেশি কিছু করা উচিত ছিল।