নানা সংকটেও সুখবর এসেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে। যেখানে লোকসানে ভরপুর, সেখানেই ফুটেছে নতুন ভোরের আলো। এক বছরের ব্যবধানে যাত্রী পরিবহনে পেয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে আয়ও।
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, চুরি, ছিনতাই ও হয়রানি অনেকাংশে কমে এসেছে। ফলে বেড়েছে ট্রেনে ভ্রমনের সংখ্যাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা সমস্যায় জর্জরিত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রতিনিয়ত লোকোমোটিভ নষ্ট হয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির মধ্যে যে পরিমান যাত্রী পরিবহন বেড়েছে তা অকল্পনীয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে রেলওয়ে অঙ্গনেও। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. সবুক্তগীনের তদারকি ও কঠোর নির্দেশনায় এমন সাফল্য এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে লোকসানের দূর্নাম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে নির্ভরতার বাহন হিসেবে পরিচিত রেলওয়ে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীন বলেন, আমাদের ইঞ্জন সংকট বহু দিনের। কিন্তু এরই মাঝে আমরা যাত্রী সেবা অব্যাহত রাখার জন্য কাজ করছি। ইঞ্জিন সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য চেষ্টা চলছে। যদি ইঞ্জন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারি তাহলে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি কার্গো ট্রেনেও আমাদের আয় বাড়বে। আমরা ট্রেনকে নিরাপদ স্বাচ্ছন্দ্যের বাহন হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ভবিষ্যতে যাত্রী ও আয় আরো বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই থেতে অক্টোবর পর্যন্ত রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন খাত থেকে আয় করেছে ৩৫৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং যাত্রী সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার। বিপরীতে ২০২৪ সালের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে আয় হয়েছিল ২৩৭ কোটি ৯ লাখ এবং যাত্রী সংখ্যা ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৬ হাজার। এছাড়াও ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যাত্রী পরিবহন খাতে আয় করেছে ৮৫৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার এবং যাত্রী ভ্রমন করেছে ৩ কোটি ৯ লাখ ৪৫ হাজার। গত বছরের চার মাসের তুলনায় এ বছর চার মাসে প্রায় ১২১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বেশি আয় করেছে রেলওয়ে। যা প্রায় ৫১ শতাংশের কাছাকাছি।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন পথে মোট ৫৮টি আন্তঃনগর ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। মেইল ও কমিউটার ট্রেন রয়েছে ৬০টি। রেলওয়েতে যাত্রী ও আয় বাড়ার পেছনে কিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত কাজ করেছে। এর মধ্যে এলাকাকে কেন্দ্র করে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা, বিভিন্ন ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোগ, ট্রেন ও স্টেশনে টিকিট চেকিংয়ে কড়াকড়ি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রেলওয়েতে পাথর নিক্ষেপ, চলন্ত ট্রেনে যাত্রী হয়রানি বন্ধসহ নানা বিষয়ে কঠোর অবস্থানে ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সবুক্তগীন। ফলে বিগত সময়ের তুলনায় রেল ভ্রমনে আগ্রহ বাড়ে যাত্রীদের।
চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে নিয়মিত ভ্রমণ করা ব্যবসায়ী ইব্রাহিম খলিল বলেন, আগে রেলওয়েতে টিকিট নিয়ে কালোবাজারির কারণে টিকিট পাওয়া যেত না। কোনো ভাবে টিকিট পেলেও পাথর নিক্ষেপ ও জানালা দিয়ে চুরি করা নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়াও চলন্ত ট্রেনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের হয়রানির কারণে ভ্রমনটা নষ্ট হয়ে যেতো। তবে এখন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের হয়রানি নেই বললেই চলে। কিন্তু এখনো কিছু এলাকায় পাথর নিক্ষেপ ও চুরির ঘটনা ঘটে। তবে রেল ভ্রমনে মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারির কারণে। আগামীতেও যদি কঠোর থাকে প্রশাসন তাহলে ভ্রমনপিপাসু মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে।
বিডি প্রতিদিন/এএম