কলোনিকে(আবাসস্থল) মারাত্মক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে অসুস্থ তরুণ পিঁপড়ারা এক বিশেষ রাসায়নিক গন্ধের মাধ্যমে সংকেত পাঠায়। যেন তারা কর্মী পিঁপড়াদের বলে, এসো, আমাকে মেরে ফেলো। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ধরনের আত্মত্যাগের ঘটনা অবশ্য রানি পিঁপড়াদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
পিঁপড়া কলোনিকে বিজ্ঞানীরা একটি একক সুপার-অর্গানিজম হিসেবে দেখেন, যেখানে সবার সম্মিলিত অস্তিত্ব নিশ্চিত করা হয়। অস্ট্রিয়া-ভিত্তিক বিজ্ঞানীদের একটি দল জানিয়েছে, আমাদের শরীরের সংক্রমিত কোষগুলি যেমন আমাকে খুঁজে খাও সংকেত পাঠায়, ঠিক তেমনি পিঁপড়াদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রক্রিয়া দেখা যায়।
ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অস্ট্রিয়ার পরিবেশবিদ এবং নতুন গবেষণার প্রধান লেখক এরিকা ডসন এএফপিকে বলেন, পিঁপড়ার বাসা হলো রোগের প্রাদুর্ভাবের জন্য একটি আদর্শ জায়গা, কারণ সেখানে হাজার হাজার পিঁপড়া একে অপরের ওপর হামাগুড়ি দেয়।
পূর্ণবয়স্ক কর্মী পিঁপড়ারা যদি এমন কোনো রোগে আক্রান্ত হয় যা কলোনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তবে তারা স্বেচ্ছায় বাসা ছেড়ে একা গিয়ে মারা যায়। কিন্তু গুটির মধ্যে থাকা তরুণ পিঁপড়াদের পক্ষে এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই তরুণ পিঁপড়ারা যখন মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তাদের শরীরে একটি রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে যা একটি বিশেষ গন্ধ তৈরি করে।
ডসন জানান, এই গন্ধের কারণে পূর্ণবয়স্ক কর্মী পিঁপড়ারা পিউপাটিকে ঘিরে ধরে, গুটি ছিঁড়ে ফেলে, পিউপার গায়ে ছিদ্র করে এবং বিষ প্রবেশ করে। এই বিষ ডিসইনফেক্ট্যান্ট বা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে, যা কলোনির জন্য হুমকিমূলক রোগজীবাণু এবং আক্রান্ত তরুণ পিঁপঠাকে উভয়কেই মেরে ফেলে।
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন যে তরুণ পিঁপড়ারা কি তবে সক্রিয়ভাবে বলছে 'আরে, এসো আর আমাকে মেরে ফেলো?'
গবেষণায় দেখা যায়, অসুস্থ তরুণ পিঁপড়ারা কেবল তখনই এই গন্ধ উৎপাদন করে যখন কর্মী পিঁপড়ারা কাছাকাছি থাকে। এর থেকে প্রমাণিত হয়, এটি ধ্বংসের জন্য একটি সুচিন্তিত সংকেত।
ডসন বলেন, যদিও এটি একটি আত্মত্যাগ, একটি পরার্থপর কাজ। তবে এটি তাদের নিজেদের স্বার্থেও বটে, কারণ এর অর্থ হলো তাদের জিন বেঁচে থাকবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্থানান্তরিত হবে।
তবে এই আত্মত্যাগের নিয়মের একটি ব্যতিক্রমও আছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, রানি পিঁপড়ার পিউপারা গুটির ভেতরে আক্রান্ত হলেও এই দুর্গন্ধযুক্ত সতর্ক সংকেত পাঠায় না। কেন এই ব্যতিক্রম? ডসনের দল জানতে পারে, রানি পিউপাদের কর্মী পিউপাদের তুলনায় অনেক উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে এবং তাই তারা সংক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। গবেষকদের মতে, এই কারণেই তারা সংকেত পাঠায়নি।
এই গবেষণাটি নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: গালফ নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল