মহাবিশ্বে এক বিরল দৃশ্য শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। একটি বিশাল ডার্ক ম্যাটার (অন্ধকার বস্তু)–এর সুতো বা ফিলামেন্টের ভেতরে থাকা ১৪টি গ্যালাক্সি একই দিক দিয়ে ঘুরছে। এই সুতোটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। গবেষকদের মতে, এভাবে একসঙ্গে ঘুরতে দেখা—এখন পর্যন্ত মহাবিশ্বে অন্যতম বৃহৎ ঘূর্ণায়মান কাঠামো।
এই ডার্ক ম্যাটার–সুতো আসলে মহাবিশ্বের কসমিক ওয়েব–এর অংশ। এর মাঝখানে প্রায় সোজা সারিতে সাজানো রয়েছে ১৪টি গ্যালাক্সি। লম্বায় প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ আর প্রস্থে ১১৭ হাজার আলোকবর্ষ। এদের ভেতর প্রচুর হাইড্রোজেন গ্যাস আছে, যা নতুন তারা তৈরি করে।
গবেষকেরা আরও জানান, এই গ্যালাক্সিগুলো শুধু সারিবদ্ধই নয়, একই সঙ্গে ঘুরছে। প্রতিটি গ্যালাক্সি নিজের অক্ষেও ঘুরছে এবং পুরো সুতোকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান। এদের ঘূর্ণনগতিও একই—প্রায় সেকেন্ডে ১১০ কিলোমিটার। অর্থাৎ যেন একটি ঘূর্ণায়মান প্ল্যাটফর্মে রাখা আলাদা আলাদা কাপ—সবাই নিজের মতো ঘুরছে, আবার পুরো প্ল্যাটফর্মও ঘুরছে (থিম পার্কের ‘টিকাপ রাইড’-এর মতো)।
দক্ষিণ আফ্রিকার MeerKAT রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে গ্যালাক্সিগুলোর গতি ও হাইড্রোজেন গ্যাসের পরিমাণ মাপা হয়। পরে যুক্ত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের আরও দুটি মানমন্দিরের তথ্য।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এভাবে গ্যালাক্সির ঘূর্ণন সাধারণত তাদের জন্মের সময়ের গ্যাস থেকে আসে। পরে সংঘর্ষ বা আশপাশের অন্যান্য গ্যালাক্সির প্রভাবে বদলাতে পারে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ডার্ক ম্যাটার–সুতোর প্রভাব খুব স্পষ্ট। ধারণা করা হয়, এই সুতোর বরাবর গ্যাস বয়ে গিয়ে গ্যালাক্সিতে পৌঁছায় এবং তাদের ঘূর্ণন ও তারার জন্মে প্রভাব ফেলে।
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে ডার্ক ম্যাটার গবেষণা ও গ্যালাক্সির গঠন–সংক্রান্ত তত্ত্বগুলোতে পরিবর্তন আনতে পারে। গবেষণাটি ৪ ডিসেম্বর Monthly Notices of the Royal Astronomical Society–এ প্রকাশিত হয়।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল