নাসার মহাকাশযান ভয়েজার–১ ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে এমন এক অবস্থানে পৌঁছাবে, যেখানে পৃথিবী থেকে পাঠানো আলো বা রেডিও সংকেত যেতে লাগবে পুরো ২৪ ঘণ্টা। এই দূরত্বকে বলা হয় এক লাইট–ডে (এক দিনে আলো যতদূর যায়—প্রায় ১৬ বিলিয়ন মাইল বা ২৬ বিলিয়ন কিলোমিটার)।
১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার–১ বর্তমানে পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫.৮ বিলিয়ন মাইল দূরে। এটি আমাদের সূর্যের চারপাশের সুরক্ষাবলয় হেলিওস্ফিয়ার (সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রের বিশাল এলাকা) ছাড়িয়ে এখন নক্ষত্রের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ঘুরছে।
ভয়েজার–১ এত দূরে যে, পৃথিবী থেকে কোনো নির্দেশ পাঠাতে অনেক সময় লাগে। প্রকল্প–ব্যবস্থাপক সুজি ডড উদাহরণ দিয়ে বলেন,
‘যদি আমি সোমবার সকাল ৮টায় ‘গুড মর্নিং ভয়েজার!’ বলি, তার জবাব পাব মঙ্গলবার সকাল ৮টায়।’
ভয়েজার–১ এবং তার যমজ ভয়েজার–২—দুটি মহাকাশযানই বহু বছর ধরে ধীরে ধীরে শক্তি কমিয়ে টিকে আছে। অনেক যন্ত্র ইতিমধ্যে বন্ধ করতে হয়েছে যাতে ন্যূনতম শক্তিতেও মহাকাশযান সচল থাকে।
মহাকাশযান দুটির অ্যান্টেনা অবশ্যই পৃথিবীর দিকে তাক করা থাকতে হয়। কারণ জ্বালানি সরবরাহকারী পাইপগুলো যদি ঠান্ডায় জমে যায় এবং অ্যান্টেনা সরে যায়, তাহলে আর কোনো সংকেত পাওয়া যাবে না। তখন মিশন বন্ধ হয়ে যাবে।
যদিও ভয়েজার–১ মাত্র ১৬০ বিট–প্রতি–সেকেন্ড গতিতে তথ্য পাঠাতে পারে (ডায়াল–আপ ইন্টারনেটের মতো ধীর), তবুও এটি এখনও সূর্যের সীমানায় কী ঘটছে সে সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দিচ্ছে। বিশেষ করে হেলিওপজ (সূর্যের প্রভাবসীমার শেষ সীমানা) নিয়ে গবেষণায় ভয়েজার–১ ও ২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নাসার দল চাইছে অন্তত ২০২৭ সাল পর্যন্ত এর বিজ্ঞান যন্ত্রগুলো চালু রাখতে। কেউ কেউ আশা করছেন—এর কাজ আরও দুই থেকে পাঁচ বছর চলতে পারে।
ডড বলেন, ভয়েজার শুধু যন্ত্র নয়—এটা আমাদের পৃথিবীর দূত। এত বছর ধরে আকাশে ভেসে থাকা সত্যিই অবিশ্বাস্য।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল