পাইলট সংকটে টানা ছয়দিন আড়াই হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিলের পর স্বাভাবিক হয়ে আসছে ভারতের ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের পরিষেবা কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের টিকিটের দাম বাবদ ৬১০ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে বিমান সংস্থাটি। পাশাপাশি, তাদের কাছে জমা থাকা প্রায় তিন হাজার মালপত্রও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের কাছে।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিবৃতি দিয়ে সেই হিসাব প্রকাশ্যে এনেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয়। ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, পরিস্থিতির স্বাভাবিক করতে সব রকম চেষ্টা করছে সংস্থাটি। আগামী ১০ তারিখের মধ্যে ফ্লাইট অপারেশন আগের ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।
এখন পরিস্থিতি কেমন, তার হিসাব দিয়েছে ইন্ডিগো-ও। বিমানসংস্থার বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,৬৫০টি ফ্লাইট বাতিল হলেও ১ হাজার ৬৫০টি নির্ধারিত সূচি মেনে চলছে।
ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের সিইও পিটার এলবার্স জানিয়েছেন, প্রায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সময় মতো পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। যাত্রীদের সহায়তা করার জন্য এবং রিফান্ড বা রি-বুকিং সংক্রান্ত সব রকম সমস্যার সমাধানের জন্য আলাদা করে একটি ‘সাপোর্ট সেল’ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি যে সব উড়ান বাতিল হচ্ছে, তা আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়ায় বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভিড়েও রাশ টানা গিয়েছে। গুরুগ্রামে ইন্ডিগোর অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার থেকে পাঠানো একটি অভ্যন্তরীণ ভিডিয়ো বার্তায় পিটার আশ্বাস দিয়ে বলেন, “ধাপে ধাপে আমরা ফিরে আসব।” আগামী বুধবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদী তার সংস্থা।
ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার নেপথ্যে ভারতের বেসামরিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ’র একটি বিধিকে দায়ী করা হচ্ছে। বিমান পরিষেবায় নিরাপত্তা আরও মজবুত করতে গত বছরে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময় এবং বিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল ডিজিসিএ। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ নামের ওই বিধিতে বলা হয়েছিল, প্রতি সপ্তাহে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের বিশ্রামের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে এবং প্রতি সপ্তাহে মাত্র ২টি বিমান রাতে অবতরণ করাতে পারবেন এক জন পাইলট (আগে এবং সংখ্যা ছিল ৬)।
বিধিতে আরও বলা হয়েছে, পাইলট এবং বিমানকর্মীদের পর পর দু’দিন নাইট ডিউটি দেওয়া যাবে সপ্তাহে এক বারই। ২০২৪ সালের জুনে এই বিধি কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু বিমানসংস্থাগুলোর অনুরোধে তা বার বার পিছিয়ে যায়। সম্প্রতি নতুন বিধি কার্যকর করার জন্য ডিজিসিএ-কে নির্দেশ দেয় দিল্লি হাই কোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশের পর জুন এবং নভেম্বরে দুই দফায় ধাপে ধাপে নির্দেশিকায় থাকা নিয়মাবলী কার্যকর করার পথে হাঁটে ডিজিসিএ।
বর্তমানে দেশের ৯০টি এবং বিদেশের ৪৫টি বিমানবন্দরে পরিষেবা দিয়ে থাকে তারা। ইন্ডিগোর অনেক বিমানই রাতে অবতরণ করে। তাই নতুন নিয়ম অনুসারে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এই বিমানসংস্থাই। এ বিধি মেনে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যত সংখ্যক কর্মী এবং পাইলট প্রয়োজন, বর্তমানে তা ইন্ডিগোর নেই। পাইলট এবং কর্মী অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে ইতিমধ্যেই যাত্রীদের কাছে একাধিক বার ক্ষমাও চেয়েছে ইন্ডিগো।
বিডি প্রতিদিন/কামাল