ভলোদিমির জেলেনস্কির সুদিন হয়তো আর বেশিদিন স্থায়ী হবে না। হয়তো অচিরেই মিত্র যুক্তরাষ্ট্র তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তেমন ইঙ্গিতই পাওয়া গেলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ছেলের কথায়।
ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ট্রাম্পের অধীনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে রবিবার এমনই মন্তব্য করেছেন ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
ট্রাম্প প্রশাসনে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থাকলেও ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (মাগা) আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ট্রাম্প জুনিয়রের এই বক্তব্য ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরে ইউক্রেনীয় সরকারের প্রতি অনীহার বিষয়টিই সামনে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকারী দল কিয়েভকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়েই তার এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে দীর্ঘ ও ক্ষুব্ধ বক্তব্যে ট্রাম্প জুনিয়র অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের দুর্নীতিগ্রস্ত ধনীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন এবং যাদেরকে 'চাষাভুষা' বলে মনে করেন, তাদেরকেই যুদ্ধ করার জন্য ফেলে গেছেন।
তিনি সরাসরি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অভিযুক্ত করে বলেন, জেলেনস্কি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন, কারণ তিনি জানেন যুদ্ধ শেষ হলে তিনি কখনোই কোনো নির্বাচনে জিততে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, জেলেনস্কি বামপন্থীদের কাছে প্রায় দেবতার মতো হলেও বাস্তবে রাশিয়া নয়, বরং ইউক্রেনই অনেক বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাসেরও কড়া সমালোচনা করে ট্রাম্প জুনিয়র ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার অকার্যকারিতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে রাশিয়া যুদ্ধের খরচ জোগাতে সক্ষম হচ্ছে। তার মতে, আমরা রাশিয়ার দেউলিয়া হওয়ার জন্য অপেক্ষা করব, এটা কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না।
ট্রাম্প জুনিয়র আরও উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি মাত্র তিনজন ভোটারের দেখা পেয়েছেন, যারা ইউক্রেন যুদ্ধকে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বিষয়ের একটি বলে মনে করতেন। তিনি ইউক্রেনের ঝুঁকির চেয়ে ভেনেজুয়েলার নৌকার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল নামক মাদক প্রবেশের ঝুঁকিকে আরও সুস্পষ্ট ও দোরগোড়ায় হাজির হওয়া বিপদ বলে বর্ণনা করেন।
কোনো তথ্যপ্রমাণ না দিয়েই ট্রাম্প জুনিয়র দাবি করেন যে এই গ্রীষ্মে মোনাকোতে এক দিনেই দেখা বিলাসী গাড়িগুলোর (বুগাটি ও ফেরারির মতো) ৫০ শতাংশই ছিল ইউক্রেনীয় নম্বর প্লেটযুক্ত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আপনি কি মনে করেন যে ইউক্রেনে আয় করা অর্থে এসব হয়েছে?
ইউক্রেনে শান্তি আনার অঙ্গীকার করে নির্বাচনে লড়া তার বাবা সহজে সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প জুনিয়র ইঙ্গিত দেন, হয়তো তিনি তা করবেন। তিনি তার বাবাকে এমন একজন রাজনীতিক হিসেবে বর্ণনা করেন, যার বিষয়ে আগে থেকে অনুমান করা কঠিন, তবে তিনি অঙ্গীকার করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রকে আর চেকবুক হাতে বোকা সেজে থাকতে দেবেন না।
সূত্র: গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল