দ্বীপ জেলা ভোলা—বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর একটি। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও অতিবৃষ্টির মতো চ্যালেঞ্জ দীর্ঘদিন ধরে এই জেলার প্রকৃতি ও জনজীবনকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে তুলেছে। সেই জলবায়ু সংকট মোকাবিলা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে বোরহানউদ্দিন উপজেলা শাখা বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় সরকারি আব্দুল জব্বার কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ সভায় স্থানীয় শিক্ষক, কলেজশিক্ষার্থী, পরিবেশকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। বসুন্ধরা শুভসংঘ বোরহানউদ্দিন শাখার সভাপতি ও সাংবাদিক আবুল বাশার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা জলবায়ু সংকটের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে করণীয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত উপস্থাপন করেন।
বক্তারা বলেন, সমুদ্র উপকূলীয় জেলা ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত দিন দিন তীব্র হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত বায়ু দূষণ ও শব্দদূষণ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ স্থাপন ও পর্যাপ্ত জলাধার না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ৭ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত নেমে যাচ্ছে—ফলে বহু গভীর নলকূপ অকার্যকর হয়ে পড়ছে। নদী-খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, যা কৃষি, মাছচাষ ও স্থানীয় অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করছে।
সরকারি আব্দুল জব্বার কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নদী-খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষিজমি ইটভাটায় নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে। নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে—স্বেচ্ছাশ্রমে খাল–বিল পরিষ্কার, বৃক্ষরোপণ ও প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ুবান্ধব জীবনযাপন ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভোলা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
সভায় বসুন্ধরা শুভসংঘ বোরহানউদ্দিন শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান ফাহিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আর দূরের সমস্যা নয়—বাংলাদেশ এখনই বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু আলোচনা যথেষ্ট নয়; প্রতিটি মানুষের মাঝে কার্যকর সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পানি সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা—এসবকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
সরকারি আব্দুল জব্বার কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শুভসংঘ যেভাবে কাজ করছে, তা আমাদের তরুণ সমাজের জন্য বড় প্রেরণা। আমরা তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানাই।
সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি আবুল বাশার বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলাকে জলবায়ুবান্ধব মডেল এলাকায় রূপান্তর করতে বসুন্ধরা শুভসংঘ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সহযোগিতায় সচেতনতাবৃদ্ধি, বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানি সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা–কেন্দ্রিক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সভা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে জলবায়ুবান্ধব চেতনা ছড়িয়ে দিতে তথ্যপত্র বিতরণ করা হয় এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে পরিবেশবিষয়ক ক্যাম্পেইন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল