ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে আজ। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সব প্রস্তুতি অবহিত করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সহযোগিতা কামনা করেছেন। প্রধান বিচারপতি পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। গতকাল বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ রেকর্ড করা হয়েছে। বলতে গেলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষায় ‘আমরা এখন নির্বাচনি ট্রেনে’। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো নিজ নিজ অবস্থান শক্ত করতে পারেনি। নির্বাচনের জন্য কোনো দল বা জোটই এখন পর্যন্ত শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি। ৩০০ আসনের মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখনো ২৮ আসন খালি রেখেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটও তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে পারেনি। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটও ৩০০ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এ জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গতকাল ১২৫ আসনে তাদের প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে। আনিসুল-মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের মাত্র আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নির্বাচনের অন্যতম অংশীজন হলো রাজনৈতিক দল ও জনগণ। দেশের জনগণ প্রায় ১৭ বছর ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা ভোটের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি এখনো সম্পন্ন হয়নি। হয়তো তফসিল ঘোষণার পর সব প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু হবে। তার পরও পর্দার আড়ালে, বাতাসে বা দেয়ালে কান পাতলে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে-‘ভাই নির্বাচন হবে তো?’ কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা বা রাজনীতির খবর রাখেন এমন সচেতন প্রাজ্ঞজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘দেখা যাক শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয় কি না।’ কেউ কেউ মনে করেন নির্বাচনি ট্রেনের শেষ গন্তব্য যদি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিই হয়, তাহলে জয়ী হবে দেশের জনগণ ও গণতন্ত্র। আরও বেশি সম্মানিত হবেন নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর পালিয়ে দেশ ছাড়বে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় জড়িত কুচক্রী কুশীলবরা।
বাংলাদেশে এ যাবৎ ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনগুলোতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত গড়ে ৪৯ দিন সময় প্রয়োজন হয়। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাইবাছাই, মনোনয়নপত্র নিয়ে আপিল, আপিলের শুনানি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের জন্য ৩০ দিন সময় লাগে। অবশ্য অতীতে পাঁচটি নির্বাচনে একাধিকবার তফসিল পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমে তফসিল ঘোষণা করা হয় ১৯৭৮ সালের ১ ডিসেম্বর। সেই তারিখ পরিবর্তন করে ২৭ ডিসেম্বর পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম তফসিলে নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয় ১৯৮৬ সালের ২ মার্চ। পরিবর্তিত দ্বিতীয় তফসিলে ভোট হয় ১৯৮৬ সালের ২২ মার্চ। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের প্রথম তফসিল ঘোষণার দিন ঠিক হয় ১৯৯০ সালের ১৫ ডিসেম্বর। সেটা পরিবর্তন করে ১৯৯১ সালের ৭ জানুয়ারি পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালে অনুুষ্ঠিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে চারবার তফসিল ঘোষণা হয়। প্রথম তফসিলে ১৯৯৫ সালের ৩ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় তফসিলে ১৯৯৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর, তৃতীয় তফসিলে ১৯৯৬ সালের ২ জানুয়ারি এবং সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ৮ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনবার তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রথমবার ভোট গ্রহণের দিন ছিল ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর, দ্বিতীয়বার ২০ নভেম্বর এবং সর্বশেষ ২৩ নভেম্বর। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যেহেতু এখনো অনেকের মধ্যে নানান সন্দেহ-সংশয় আছে, সে কারণেই দেশবাসীর প্রত্যাশা হলো নির্বাচনি ট্রেনের যাত্রা যেন ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়।
এবার জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলের ওপর। নির্বাচন কমিশন জোটের প্রার্থীদের ‘একটি’ মার্কা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আইনে পরিণত করেছে। কমিশনের রিপোর্টের ৭.১১ ধারায় জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘অংশীজনের সঙ্গে আলোচনাকালে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রার্থীগণ তাদের স্ব স্ব দলের জন্য নির্ধারিত প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে অনেকে মতামত প্রদান করেন। সংস্কার কমিশন মনে করে, জোটবদ্ধ হওয়ার ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছোট দলগুলো বড় দলের প্রতীক ব্যবহার করে থাকে। ফলে ছোট দলগুলোর কোনো রাজনৈতিক দর্শন, আদর্শ, নীতি বা স্বতন্ত্রসূচক কোনো কার্য ভোটারের কাছে প্রতিফলিত হয় না। অন্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার ফলে ভোটার দল বা প্রার্থী বিবেচনা না করে প্রতীক দেখেই ভোট দিয়ে থাকেন। মূলত ভোটার এ ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন। ছোট দলগুলো যেন তাদের রাজনৈতিক দর্শন, নীতি বা নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যসূচক কার্য পরিচালনা করে দলকে শক্তিশালী করতে পারে, এ লক্ষ্যে আরপিও অনুচ্ছেদ ২০-এর দফা(১) উপদফা (ক)-এর শতাংশে সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে।’ কমিশন এ ক্ষেত্রে সংশোধনের যে সুপারিশ করে, তা হলো- ‘দুই বা ততোধিক রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে যৌথভাবে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রার্থীগণ তাদের স্ব স্ব দলের নির্ধারিত প্রতীকই বরাদ্দ পাবেন এমন ধারা যুক্ত করা।’ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি আরপিও সংশোধন করে। এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। বিশেষ করে ছোট দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন (ইসি) এমন বিধান করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল। শরিকদের কথা চিন্তা করে পরিবর্তনের দাবি জানালেও তা মানেনি ইসি। আবার জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি দলগুলো বলছে, আরপিওতে প্রতীকসংক্রান্ত নতুন নিয়ম তারা সমর্থন করছে। কারণ তারা মনে করছে, এর মাধ্যমে জোটবদ্ধ হলেও দলগুলো স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। জোটের মার্কার বিষয়ে পেছনের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থেকেও জাতীয় পার্টি তাদের লাঙল প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করেছিল। আবার ওই নির্বাচনসহ ২০২৪ পর্যন্ত পরের সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি ও হাসানুল হক ইনুর জাসদের প্রার্থীরা। আবার ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। তবে জামায়াতে ইসলামী সেই নির্বাচনে তাদের দলীয় দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়েই অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এত দিন জোটবদ্ধ দলগুলো নিজেরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানাত যে তারা জোটের প্রতীকে নির্বাচন করতে চায়। আবার জোট থেকেও প্রতীক নিয়ে একটি চিঠি কমিশনকে দেওয়া হতো। ফলে জোটের প্রতীক নিয়ে যেমন নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেত, তেমন জোটবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল। এবার মার্কার সংকটে পড়েছে নির্বাচনমুখী জোটবদ্ধ বিভিন্ন দল। সে কারণেই কোনো কোনো ছোট দল নিজে থেকেই বিলুপ্ত ঘোষণা করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম সোমবার নিজ দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। কারণ বাংলাদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত যে নির্বাচনে প্রার্থীর চেয়ে মার্কাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মোহাম্মদ মাহতাব উদ্দিন আমার লেখার একজন পাঠক। চার মাস পর হাওড়াঞ্চলের মাহতাব ফোন করে অনেক কথা বললেন। প্রায় ১০ মিনিট একদমে কথা। শুরুতেই আমার ওপর তার অনেক অভিমান প্রকাশ করলেন। বললেন, ‘স্যার, আপনে জানেন আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত। আপনে তো আমার জন্য কিছুই করলেন না। আমি আপনের কাছে কিছু চাই না। আমারে শুধু একটা টিকেট জোগাড় কইরা দেন। আমারে নিরাশ কইরেন না স্যার। আপনে ইচ্ছা করলেই আমি একটা টিকেট পাইতে পারি। স্যার, আপনে তো জানেন অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারি নাই। বিয়াশাদি করি নাই। কোনো পয়পোলাপান নাই। মরে গেলে আমার কবরের পাশে দাঁড়াইয়া কেউ যে রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগিরা পড়বে, এই মানুষটাও তো আমার নাই। একটা টিকেট পাইলে তো আমার সব চিন্তা দূর হইয়া যায়।’ প্রশ্ন করলাম, ‘কীসের টিকিট, কোথায় পাওয়া যায়?’ উত্তরে অনেকটা বিস্মিত হয়েই মাহতাব বললেন, ‘কেন স্যার, আপনে জানেন না, সারা দেশে যে বেহেশতের টিকেট বিক্রি হইতাছে। আমারে আপনে একটা বেহেশতের টিকেট জোগাড় কইরা দেন। আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। বিনিময়ে আমি আপনেরে কিছুই দিতে পারব না। আমি জানি আপনে মাছ খুব পছন্দ করেন। আপনে কিছু মনে না করলে একদিন আপনের জন্য হাওড়ের দেশি কিছু মাছ নিয়ে আসব। দয়া কইরা একটা টিকেট জোগাড় কইরা দেন।’ মাহতাবের কথা শুনে আমি রীতিমতো হতবাক হয়ে গেলাম। কিছু বলতে পারলাম না। তারপর আরও অনেক কথা বললেন। মাহতাব অত্যন্ত রাজনীতিসচেতন মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সার্টিফিকেট তার নেই। কিন্তু তার বিস্তর পড়াশোনা আছে। একপর্যায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খবর জানতে চাইলেন। যতটুকু জানি ততটুকু তাকে বললাম। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও বিএনপির রাজনীতি প্রসঙ্গে মাহতাব বললেন, ‘স্যার, আমার মনে হয় বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার মতো রাজনীতিবিদ আর জন্ম নিবে না। তিনি দেশের মানুষের যে দোয়া ও ভালোবাসা পাইছেন, তা আর কারও ভাগ্যে জুটব না। আমি উনার জন্য তাহাজ্জতের নামাজ পইড়া দোয়া করি। স্যার আরেকটা কথা। তারেক রহমান স্যারের সঙ্গে আপনের যদি কথা হয়, তাইলে আমার সালাম জানাইয়া বলবেন, মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তর লইয়া তার বক্তব্যে দেশবাসীর কাছে তার রাজনীতি তিনি পরিষ্কার করছেন। এইটাই বিএনপির রাজনীতি হওয়া দরকার।’
মাহতাবের মতো আমরা সবাই দেশ, দেশের মানুষ, দেশের উন্নতি-সমৃদ্ধি, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে চিন্তা করি। অতীতে ক্ষমতার লোভের কারণে দেশে নানান সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। দেশে গণতান্ত্রিক সরকার চাই। বর্তমান সরকার সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে এখনো দেশবাসী আশায় বুক বেঁধে আছে। আবার কোনো লোভের কারণে যদি নির্বাচন সময়মতো না হয়, দেশ যদি আবার কোনো সংকটে পড়ে তাহলে এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের জন্য কোথাও কোনো হেলিকপ্টার অপেক্ষায় থাকবে না।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
manju209@yahoo.com