ভারতীয় হিন্দি সিনেমা ‘মিশন রায়গঞ্জের’ চিত্রায়ন যেন। সিনেমায় আটকে পড়া সুড়ঙ্গ থেকে খনিশ্রমিকদের উদ্ধারে অক্ষয় কুমারের চেষ্টা, মানুষের উদ্বেগ, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সবাইকে প্রতিটি মিনিটে শিহরিত করেছে। তেমনি রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের ৫০ ফুট গভীরতা থেকে দুই বছরের শিশুকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় মানুষের চেষ্টা ছিল। তবে বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিশুটিকে
উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট গ্রামের ঘটনা এটি। বুধবার দুপুরে মা রুনা খাতুনের পেছনে পেছনে হাঁটছিল শিশু সাজিদ। হঠাৎ পেছনে ফিরে মা দেখতে পান সাজিদ নেই। এরপর গভীর নলকূপের গর্তে তার কান্না শুনতে পান। দুপুর ১টার দিকের এ ঘটনায় খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। শিশুটির বাবার নাম রাকিবুল ইসলাম। কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামেই তার বাড়ি। সময় গড়াতে থাকলে বেলা ৩টার দিকে গর্তের ভিতরে অক্সিজেন পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ৪টার দিকে ক্যামেরা পাঠিয়ে শিশুটির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে থাকে ফায়ার সার্ভিস। তার পরও শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় বিকাল ৫টা থেকে স্থানীয়রা কোদাল দিয়ে মাটি কেটে সুড়ঙ্গে যাওয়ার পথ তৈরি করতে শুরু করেন। ৫টার কিছু পরে এক্সকেভেটর মেশিন লাগিয়ে শুরু হয় মাটি কাটা।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান, ৩৫-৪০ ফুট গর্তে পড়েছে শিশুটি। এক্সকেভেটর দিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও তানোর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। তবে গর্ত চিকন হওয়ায় উদ্ধারে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগবে। স্থানীয়রা প্রথমে উদ্ধার তৎপরতা চালানোয় শিশুটির ওপর মাটিচাপা পড়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, গ্রামের পাশের এ জমিটির মালিক কছির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। এক বছর আগে কছির উদ্দিন তার জমিতে সেচের জন্য একটি সেমিডিপ নলকূপ বসানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ৩৫ ফুট বোরিং করার পর সেখানে পানি পাননি। তাই নলকূপ বসানো হয়নি। এক বছর ধরে ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গর্তটি সেভাবেই পড়ে ছিল। বুধবার দুপুরে শিশুটির মা ওই মাঠে ধানগাছের খড় নিতে যান। ওই সময় সাজিদ খেলতে গিয়ে গর্তে পড়ে মাটির ভিতরে ঢুকে যায়। স্থানীয়রা প্রথমে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।
বিভাগীয় কমিশনার আ ন ম বজলুর রশীদ জানান, শিশুটিকে উদ্ধারে প্রশাসন চেষ্টা করছে। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবস্থান করছেন।