রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় ঘাতক সেই গৃহকর্মী আয়েশাকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জোড়া খুনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। চুরির অপবাদ দেওয়ায় জন্ম নেওয়া ক্ষোভ ও চুরি ধরা পড়ার ভয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত শুরু করে আয়েশা। প্রথমে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজের (৪৮) শরীর ক্ষতবিক্ষত করলে ধস্তাধস্তি ও গোঙানির শব্দে চলে আসে তার মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ (১৫)। নাফিসাকেও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় নিজের কাপড়ে রক্ত লেগে গেলে ছদ্মবেশ ধরতে নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে পালিয়ে যান আয়েশা।
গতকাল ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বি শিকদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর স্বামীর সঙ্গে দাদাশ্বশুরের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন আয়েশা। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের মাত্র চার দিন আগে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন তিনি। এরই মধ্যে বাসা থেকে কিছু মালামাল চুরি হয়। ওই চুরির অপবাদ দেওয়ায় ক্ষোভ জন্ম নেয় আয়েশার। এরই মধ্যে ঘটনার দিন চুরি করে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় চেক করার এবং পুলিশে খবর দেওয়ার কথা বলেন লায়লা আফরোজ।
আর এতেই লায়লা আফরোজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা শুরু করেন। তার চিৎকারে মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে আয়েশা। এরপর বাসা থেকে দুটি ল্যাপটপ ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেটি জানতে আয়েশাকে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, হত্যাকাণ্ডের পর আয়েশা ঝালকাঠির নলছিটি এলাকার কয়ারচরে দাদাশ্বশুরের বাড়ি আশ্রয় নেয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসা থেকে নেওয়া দুটি ল্যাপটপের মধ্যে একটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এবং একটি আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। বিক্রি করে দেওয়া ল্যাপটপটিও উদ্ধার করা হবে। মোবাইল ফোনটি তিনি পানিতে ফেলে দিয়েছেন। বাসা থেকে আয়েশা কোনো স্বর্ণালংকার ও টাকা নেননি বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, নরসিংদী জেলার সদর থানার সলিমগঞ্জের রবিউল ইসলামের মেয়ে ঘাতক আয়েশা। বর্তমানে তিনি সাভারের হেমায়েতপুর পূর্বহাটি এলাকায় স্বামী রাব্বী শিকদারকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। প্রতিদিন পূর্বহাটি এলাকা থেকে মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় গিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পর আয়েশা বাসায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তার স্বামীকে জানান। এর কয়েকঘণ্টা পর বিষয়টি তারা টেলিভিশনে দেখে গ্রেপ্তার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তখন রাব্বি দ্রুত সময়ের মধ্যে তার ছোট সন্তানের কথা ভেবে স্ত্রীকে নিয়ে তার দাদা বাড়ি ঝালকাঠিতে রওনা হন। এরপরই পুলিশ তাদের বর্তমান বাসায় গিয়ে ফাঁকা দেখতে পায়। একপর্যায়ে আয়েশার মাকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয়, স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে আয়েশা ঝালকাঠি অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার শাহজাহান রোডের একটি বাসার সাত তলায় খুন হন মা-মেয়ে। মা লায়লা আফরোজের শরীরে অন্তত ৩০টি এবং মেয়ে নাফিসার শরীরে ৬টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে জানতে পারে গৃহকর্মী আয়েশা বোরকা পরে ওই বাসায় প্রবেশ করেন এবং মুখে মাস্ক ও স্কুল ড্রেস পরে বেরিয়ে যান। ওই ফুটেজ সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকে আয়েশা আত্মগোপনে ছিলেন। পরে পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত দুটি ছুরি বাথরুমের বালতির মধ্য থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় লায়লার স্বামী আজিজুল ইসলাম গৃহকর্মী আয়েশার নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আজ (বৃহস্পতিবার) আয়েশাকে ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে।