অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। গতকাল বিকাল ৫টা নাগাদ তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পদত্যাগ কার্যকর হবে। গতকাল সন্ধ্যায় যমুনার বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই দুই ছাত্রনেতার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করেন। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তির পথে অবদান রেখেছ, তা জাতি মনে রাখবে। আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বিকাশে তোমরা একইভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবসময় তোমাদের অবদান স্মরণ করবে। আমি তোমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করি। এত অল্প সময়ে তোমরা জাতিকে যা দিয়েছ, তা জাতি কখনো ভুলবে না। আমি আশা করি আগামীতে বৃহত্তর পরিমণ্ডলে তোমরা আরও বড় অবদান রাখবে।
নিজেদের কর্মের মাধ্যমে দেশের মঙ্গলে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে দুই ছাত্রনেতার উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারে থেকে যে অভিজ্ঞতা তোমরা অর্জন করেছ, তা ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে লাগাতে হবে।
এর আগে গতকাল বিকালে সচিবালয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি। কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন এ ব্যাপারে পরে জানানো হবে। সাংবাদিকের প্রশ্নে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমি নির্বাচন করব। এটা স্পষ্টভাবেই বলা যায়। কিন্তু কোথা থেকে করব, কোন দল থেকে করব, সেটা পরবর্তী বিশ্লেষণ। আসিফ মাহমুদ বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে তিনি গতকাল বুধবার সকালেই তার হিসাব বিবরণী দাখিল করেছেন এবং কূটনৈতিক পাসপোর্টটি বাতিল করেছেন।
এদিকে আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ আসন (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। গত ৯ নভেম্বর ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে ধানমন্ডিতে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন তিনি। এমনকি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা বা দলটি থেকে ভোট করতে চান বলেও খবর বের হয়। তবে ৪ ডিসেম্বর বিএনপি যে ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তাতে ঢাকা-১০ আসনও রয়েছে। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে আসিফ মাহমুদের রাজনৈতিক ঠিকানা কী হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ। মাহফুজ আলম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি তথ্য উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হন মো. নাহিদ ইসলাম।
তিনি পদত্যাগ করার পর তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম। শুরুতে মাহফুজ আলম প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলেন।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ শুরুতে ছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ এফ হাসান আরিফকে (প্রয়াত) সরিয়ে আসিফ মাহমুদকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় গত বছরের নভেম্বরে। এরপর থেকে তিনি স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, আমাদের কথা নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে গতকালও সারা দেশের সব ইউএনওকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
‘হাঁ’, ‘না’ ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আমরা আশাবাদী বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজনও এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।