বুকভরা সাহস আর হাজারো স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষায় আসেন দেশসেরা মেধাবীরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়তে এসে প্রথমেই অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হন। বর্তমান সময়ে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে টিউশনি পাওয়া। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীর জন্য টিউশনি পাওয়াটা বেশি কঠিন।
টাকার অভাবে কী করে পড়াশোনা করবেন ভেবে দিশাহারা হন স্বপ্ন দেখা তরুণরা। সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা হাজারো তরুণের ভরসা ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় মেধাবী অথচ অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ তৈরি করছে নতুন ইতিহাস। দরিদ্র মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানোর অদম্য প্রয়াস, দায়িত্বশীল ও মানবিক মানুষ হয়ে দেশ গঠনের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে তরুণদের।
বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃত্তি পেয়ে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হাজারো তরুণ এখন নিজেকে সৃষ্টিশীল করে তুলতে ব্যস্ত। তাঁরা জানিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তাপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর অনুভূতি তুলে ধরেছেন জাকারিয়া জামান। বৃত্তিপ্রাপ্তদের নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের ষষ্ঠ পর্ব ছাপা হলো আজ।
দিশাহারা আমি পেয়েছি আলোর ঠিকানা
যখন আমার মতো শিক্ষার্থীর জীবনে চারদিকে অমানিশা নেমে আসে, দিশাহারা হয়ে যাই, ঠিক তখনই আশার আলো হয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। শুধু শিক্ষার্থীদেরই নয়, সমাজের হাজারো অসহায়, নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের স্বপ্নপূরণের সারথি হয়ে কাজ করে আসছে বসুন্ধরা গ্রুপের এই এই মানবিক সংগঠনটি।
২০১০ সাল। আমার বয়স মাত্র চার বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার বাবা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আমরা তিন ভাই-বোন তখন অনেক ছোট।
মায়েরও উপার্জনের কোনো পথ ছিল না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। শুরু হয় আমাদের জীবনযুদ্ধ। মা ছিলেন দৃঢ়প্রত্যয়ী। তিনি এ সমাজের সঙ্গে সংগ্রাম করে আমাদের তিন ভাই-বোনের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো থাকার কারণে স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের আর্থিক দিকটি বিবেচনায় রাখতেন।
এভাবেই দাঁত কামড়ে দিন যাচ্ছিল। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরেই সংসারের সব দায়িত্ব নিতে হয় আমার ভাইকে। নিজের পড়াশোনার খরচ, সংসারের অন্যান্য খরচ, এর সঙ্গে আমাদের দুই বোনের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে হয়েছে ভাইকে। আল্লাহর অশেষ রহমতে ভাইয়ের হাত ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পদার্পণ। গ্রামের প্রথম ঢাবিয়ান হিসেবে এই শহরে এলাম।
একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে চোখে অন্ধকার। শুরু হয়ে গেল নতুন চিন্তার ক্ষেত্র। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রাজধানী শহরে এসে কিভাবে নিজেকে খাপ খাওয়াব? থাকা-খাওয়ার খরচই বা পাব কোথায়? জেলা শহরে টিউশনি করে পরিবার চালানোর পাশাপাশি আমার ভাই আমার খরচও দিতে পারবেন? পরিবারের এমন অবস্থায় আমি কিভাবেই বা টাকা চাইব? নানা প্রশ্ন নিজেকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। হলে তখনো সিট পাইনি। ঢাবিতে চান্স পাওয়ার পরই ঢাকায় আমার প্রথম আসা। নতুন হওয়ায় কোনো টিউশনির ব্যবস্থাও করতে পারিনি। সব মিলিয়ে মাসিক খরচ অনেক, যা আমার ভাইয়ের টিউশনির সামান্য টাকায় পূরণ করা ছিল প্রায় অসম্ভব। মাস শেষে পরিবারের কাছে টাকা চাওয়ার সাহস হতো না আমার। তিন মাস এভাবে চলার পর লোকলজ্জা উপেক্ষা করে এলাকার এক বড় ভাইকে বললাম একটি টিউশনি অথবা কোনো বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিতে। তখনই তিনি হাজারো শিক্ষার্থীর বটবৃক্ষ, স্বপ্নপূরণের সারথি বসুন্ধরা গ্রুপের মানবিক ও সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের নাম বললেন। ইমদাদুল হক মিলন স্যার বরাবর আবেদন করার পরবর্তী মাস থেকেই আমাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে তারা। এই সহায়তা আমার মানসিক চাপকে কমিয়ে পড়াশোনায় অধিকতর মনোযোগী হতে সাহায্য করেছে। বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে আমি শুধু আর্থিক সহায়তা পাইনি, শিক্ষা পেয়েছি কিভাবে সমাজের অসহায় মানুষের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হয় আর পথহারা, দিশাহারা মানুষকে দিতে হয় আলোর সন্ধান। তাদের দেওয়া এই শিক্ষা আমাকে সমাজের প্রতি আরো দায়িত্বশীল হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই সংগঠনের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। সব সময় দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের জন্য। এগিয়ে যাক বসুন্ধরা শুভসংঘ, হাসি ফুটুক সমাজের দুঃখী ও অসহায় মানুষের মুখে।
আমি ও আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ
আমি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের পরিবারে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষমও ছিলেন। হঠাৎই তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর বড় ভাই কোনোভাবে সংসারের হাল ধরেন। তিনি টিউশনি করে আমাকে পড়ার খরচ দিতেন। ভাইয়ের টিউশনির আয়ে আমাদের সংসার, আমার পড়াশোনা চলে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসের খরচ, বই কেনা, ক্লাসে যাতায়াত ও অন্যান্য ব্যয় বহন করা ভাইয়ের পক্ষে ছিল খুবই কষ্টসাধ্য।
তখনই বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি আমার পরিবারের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে। এখন আমি চিন্তামুক্তভাবে পড়াশোনাসহ প্রয়োজনীয় বই-খাতা কিনতে পারছি। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার কাছে নিজের পরিবারের মতো। আগে যেমন বাড়ি থেকে মাসের শুরুতেই চলার কিছু টাকা পেতাম, এখন বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে মাসের শুরুতেই নিশ্চিন্তে চলার টাকা পাই। এই বৃত্তি পেয়েছি বলেই আমি পড়াশোনার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে পারছি। একসময় নিজের হাতখরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হতো। এখন আমি নিজের দক্ষতা উন্নয়নে সময় দিতে পারছি। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমি ও আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ। তাদের এই সহানুভূতি, এই মানবিক উদ্যোগ সমাজ পরিবর্তনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতে আমি এমন কোনো অবস্থানে যেতে চাই, যেখান থেকে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে পারি; যেভাবে বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
এখন সবজি ডাল আর পাঁচ টাকার ভাত খেতে হয় না
আমার বাবা মো. ওয়াজিদুল ইসলাম রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। আমরা দুই বোন ও এক ভাই। ছোট বোন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স প্রথম বর্ষে অ্যাকাউন্টিং বিভাগে ভর্তি হয়েছে এবং ছোট ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।
পরিবার চলে বাবার উপার্জনে। গ্রামের দিকে বাড়ি নির্মাণের কাজ সীমিত, যার তুলনায় মিস্ত্রির সংখ্যা অনেক। বাবাকে বেশির ভাগ সময় কর্মহীন থাকতে হয়। অল্প কিছু আবাদি জমি ছিল, সেটিও আট বছর আগে মায়ের অসুখের জন্য বন্ধক দিয়েছিলেন তিনি।
এখনো এভাবেই আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম বর্ষে বাড়ি থেকে পড়ার খরচ দেওয়া হতো সপ্তাহ বা ১৫ দিন পর পর। তা-ও ৫০০ বা এক হাজার টাকা। অনেক কষ্টে একটি টিউশনি পাই অন্যজনের বদলি পড়ানোর জন্য।
পরে টিউশনিটা আমিই পাই। তিন হাজার টাকা দিত। টিউশনির টাকা দিয়েই চলতাম। বাড়ি থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। টাকা চাইতেও লজ্জা লাগত, যদিও বাবা কিছু বলতেন না।
কিন্তু আমি বুঝতাম বাবার কষ্ট হচ্ছে। ২০২৪-এর নভেম্বর পর্যন্ত সেই টিউশনি কন্টিনিউ করতে পেরেছি। এরপর টিউশনি চলে গেল। পড়ে গেলাম অকূলপাথারে। বাড়ি থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করেছি দেখে আর চাইতেও পারছিলাম না। আর্থিক টানাপড়েনের কথা শেয়ার করলে এক সহপাঠী জানাল বসুন্ধরা শুভসংঘের কথা। সেও বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে মাসিক বৃত্তি পায়। ইমদাদুল হক মিলন স্যার বরাবর আবেদন করি। আলহামদুলিল্লাহ, বৃত্তি পাওয়ার জন্য সিলেক্টেড হই। সিলেক্টেড হওয়ার পর থেকে শুধু এটি মনে হয়েছিল, বাবাকে আর সংকোচে বলতে হবে না টাকা শেষ হয়ে গেছে। কী খেয়েছি জিজ্ঞেস করলে গলার স্বর নিচু করে বলতে হবে না, সবজি ডাল আর পাঁচ টাকার ভাত। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার মাথার ওপর একটি ছাদ হয়ে আছে। ক্যাম্পাসের শত শত শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এখন আর তাদের দরিদ্রতার চিন্তা নিয়ে খেতে বসতে হয় না। পড়তে বসলে অসহায়ত্বের চিন্তা নিয়ে অমনোযোগী হতে হয় না। বসুন্ধরা শুভসংঘের জন্যই আমিসহ অনেক শিক্ষার্থী এই ক্যাম্পাসে টিকে আছি আর্থিক, মানসিকভাবে। বসুন্ধরা শুভসংঘের জন্য শুভ কামনা। শুভ কাজ আনাচকানাচে ছড়িয়ে যাক। বসুন্ধরা গ্রুপের কল্যাণে আরো অনেক প্রান্তিক সুবিধাবঞ্চিত তাদের বিকশিত করার সুযোগ পাক।
আমরা দুই বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি বসুন্ধরার সহায়তায়
শুরুতেই বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি আমার কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ। এই শিক্ষাবৃত্তির জন্যই আমি নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি। এই বৃত্তি না থাকলে অনেক সমস্যায় পড়তে হতো এবং ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারতাম না।
আমাদের পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচ। আমার বোনও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সেও বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে প্রতি মাসে বৃত্তি পায়। ২০১১ সালে আমার বাবা চাকরি থেকে অবসরে যান এবং তাঁর পেনশনের সমুদয় অর্থ একটি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। কিছু মাস পরেই সেই ব্যবসায় ধস নামে। এর পর থেকে আমাদের পরিবারে নানাভাবে আর্থিক সমস্যা লেগেই ছিল। পরিবারের হাল ধরতে বড় ভাই নিজের পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। তাঁর একার পক্ষে পাঁচ সদস্যের সংসার সামলানো খুব কষ্টের ছিল। তা-ও আমি আর আমার বোন খুব কষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর ঢাকায় এসে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হই। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল আর্থিক সমস্যা। পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে নিজের খরচ চালাতে টিউশনি খোঁজা শুরু করি। কোনো টিউশনি পাইনি।
ঢাকা শহরে নতুন হওয়ায় কোনো রাস্তাঘাট চিনতাম না। সব সময় মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতাম। পড়াশোনা করতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার পর থেকে আমি চিন্তামুক্তভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আমার পরিবারের ওপর থেকেও চাপ কমে গেছে। আমার স্বপ্ন, নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং পরিবারকে সাহায্য করা। সেই সঙ্গে সমাজের জন্য কিছু করা। ভালো কোনো চাকরি পেয়ে আমিও মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। যেমনটি দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাকে প্রেরণা দেয় নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে। শুধু নিজের চিন্তা করলে হবে না, সমাজের মানুষের কথাও চিন্তা করতে হবে। বসুন্ধরা শুভসংঘ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের এই আদর্শকে আমিও ধারণ করে চলি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, বসুন্ধরা গ্রুপের সবাই ভালো থাকুক। মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করে যাক।
স্বপ্নপূরণে বড় বাধা ছিল আর্থিক সমস্যা
আমার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায়। বাবা দিনমজুর এবং তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। পরিবারে মা-বাবা, আমি ও ছোট ভাইসহ পাঁচ সদস্য। ছোট ভাই বর্তমানে হাই স্কুলে পড়াশোনা করছে।
বাবার অল্প আয়ে সংসারের সব খরচের পাশাপাশি আমাদের দুজনের শিক্ষাব্যয় বহন করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতাম। দ্বিতীয় বর্ষের মাঝামাঝি সময়ে টিউশনি চলে যায়। পায়ের ব্যথার কারণে দীর্ঘ পথ হাঁটা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে। ফলে নতুন টিউশনি খোঁজাও সম্ভব হয়নি। তখন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল এবং আমি দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম। এই সময়ে বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার পর থেকে আমি পুরোপুরি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারছি।
গত সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৬৯ এবং চলতি সেমিস্টারে ইনশাআল্লাহ ৩.৭৫+ পাওয়ার আশা করছি। ভবিষ্যতে অ্যাডমিন ক্যাডার হওয়ার লক্ষ্যে চাকরির প্রস্তুতিও শুরু করেছি। এই শিক্ষাবৃত্তিটি আমার শিক্ষাজীবনের গতি বৃদ্ধি করেছে। আগে যেখানে আর্থিক সমস্যা আমার স্বপ্নপূরণে বড় বাধা ছিল, এখন সেই সমস্যা দূর হয়েছে। শুধু পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার সুযোগই নয়, আমাকে মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসী করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
আমার স্বপ্ন অ্যাডমিন ক্যাডার হয়ে দেশের সেবা করা। সেই পথে এগোতে হলে পড়াশোনা অব্যাহত রাখা জরুরি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করলে বোঝা যায়, এই বৃত্তি ছাড়া আমার উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি, তারা আমার স্বপ্নপূরণের পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ইনশাআল্লাহ আমি লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।
বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা চালাতে পারছি
জীবনে অনেক সংগঠনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে, কিন্তু যে সংগঠনকে অনেক কাছের ফিল করেছি, নিজের পরিবার মনে করেছি, তা হলো আমাদের বসুন্ধরা শুভসংঘ। লাখো শব্দেও বসুন্ধরা শুভসংঘের ভালো কাজের বর্ণনা লিখে শেষ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার ইউনিভার্সিটি লাইফে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরও যখন টাকার অভাবে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা হতো না, তখনই পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।
আমি খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ছোট থেকেই নিজের পড়াশোনা নিজেকেই চালাতে হয়েছে। কখনো অন্যের কাজ করে, কখনো শিক্ষকের সহয়তায়। কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে এসে আমি পুরোপুরি ব্যর্থ এবং চরম হতাশায় ভুগতে থাকি। ভাবছিলাম পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেব। কোনো চাকরি করব বা গার্মেন্টসে জয়েন করব। ঠিক সে সময়ই বসুন্ধরা শুভসংঘ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি।
আমার হয়তো পড়াশোনাই সম্ভব হতো না এই বৃত্তি না পেলে। এমনও হয়েছে, একটি ড্রেস পরে প্রতিদিন ক্লাসে গিয়েছি। এক বেলা খেয়ে, আরেক বেলা না খেয়ে থেকেছি। এ কারণে মাঝেমধ্যে ক্লাসও মিস হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, এখন বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বৃত্তিটা পাওয়ার পর আমার পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে পারছি। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার কনফিডেন্স পেয়েছি। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এই বৃত্তি শত শত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর জীবনে অনেক বড় অবদান রাখছে।
এখন টিউশনি না থাকলেও চিন্তা করতে হয় না
সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। বাবা লাকড়ি বিক্রেতা। আমরা চার ভাই-বোন সবাই লেখাপড়া করি। বাবাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।
তাঁর সীমিত আয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ মেটানোর পর আমাদের পড়ার খরচ দেওয়া সম্ভব হয় না। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে আমি দশম শ্রেণি থেকেই টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালাতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও নিজের খরচ জোগাতে টিউশনি করার চেষ্টা শুরু করি, কিন্তু ফার্স্ট ইয়ার হওয়ার কারণে টিউশনি পাওয়া যাচ্ছিল না। আবার যেটি পাওয়া যায় খুবই সামান্য টাকা।
তবু নিজের চলার জন্য আমাকে তেমন টিউশনিই করতে হয়। কিন্তু একটি অনিশ্চয়তা থেকেই যেত। পরের মাসে টিউশনিটা থাকবে কি না, না থাকলে কিভাবে চলব, নতুন টিউশনি আদৌ পাব কি না? এসব চিন্তা আমাকে সব সময় আঁকড়ে ধরত। টিউশনি থেকে যা পেতাম, তা দিয়ে আমার খরচ চালানো সম্ভব হতো না।
কারণ আমি বাড়ি থেকে কোনো টাকাই পেতাম না। পুরো খরচ আমার নিজেকে বহন করতে হয়। এত আর্থিক অনিশ্চয়তায় লেখাপড়ার খুব ক্ষতি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে জানতে পারি এবং আবেদন করি। সবকিছু শুনে ইমদাদুল হক মিলন স্যার বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া এই শিক্ষাবৃত্তি আমাকে আর্থিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখন টিউশনি না থাকলেও চিন্তা করতে হয় না। কারণ বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার পাশে আছে। আমার মতো হাজারো অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। তাদের এই সহযোগিতা না পেলে আমার পক্ষে লেখাপড়া চালানো অসম্ভব হতো। ধন্যবাদ বসুন্ধরা শুভসংঘ, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। বসুন্ধরা শুভসংঘের এই যাত্রা অবিরাম চলতে থাকুক।
আমার ভরসার জায়গা বসুন্ধরা শুভসংঘ
দরিদ্র পরিবার থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে আমার সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা ও আশ্রয়স্থল বসুন্ধরা শুভসংঘ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথমেই যে সমস্যার মুখোমুখি হই, তা হলো অর্থের অভাব। কোনো টিউশনি পাচ্ছিলাম না। নিরাপত্তার চিন্তায় টিউশনি করতেও ভয় পেতাম।
বাবা ছোট্ট মনিহারির দোকান করেন। তাঁর পক্ষে সংসার চালিয়ে আমার পড়ার খরচ দেওয়া বেশ চাপের ছিল বুঝতে পারতাম। তাই কোনো রকম চলার চেষ্টা করতাম। একদিন হলের এক বড় আপুকে আমার অসহায়ত্বের কথা জানাই।
তিনি ইমদাদুল হক মিলন স্যার বরাবর আবেদন করতে বললেন। সবকিছু রেডি করে একদিন বসুন্ধরা শুভসংঘের অফিসে গেলাম। বরাবরই আমার খুব সংকোচ অনুভব হতো, কিভাবে নিজের আর্থিক সমস্যা খোলাখুলি বলব। কিন্তু আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো ওখানে গিয়ে।
মিলন স্যার আমাদের সঙ্গে এতো সুন্দরভাবে কুশল বিনিময় করলেন এবং আতিথেয়তা দিলেন, ভুলেই গিয়েছিলাম কী জন্য এসেছি। এতটা আপন মনে হলো পুরোটা সময়। সবার পরিচয় নিলেন কে কোথায় থাকি, কী সমাচার। অনেকক্ষণ ধরে গল্প করলাম আমরা সবাই। সবাইকেই শিগগিরই বৃত্তি প্রদানের ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেন স্যার।
ওই দিন শুধু সুন্দর স্মৃতিই তৈরি হয়নি, আমি নতুন একটি পরিবারও পেয়েছি। এভাবেই আমি বসুন্ধরা শুভসংঘ নামক সুন্দর পরিবারের সঙ্গে জুড়ে যাই এবং এটি আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। আশ্চর্যের ব্যাপার ওই দিনের পর মাত্র এক মাসের মধ্যেই আমরা বৃত্তি পাওয়া শুরু করি, যা এখনো চলমান। এখন দিন পার করাটা আর আগের মতো কঠিন লাগে না। একটি ভরসার জায়গা আছে আমার বসুন্ধরা শুভসংঘ, যার জন্য আমি আমার পড়াশোনা ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারছি। এভাবেই হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পাশে শক্ত বটগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘ। অনেক অনেক প্রার্থনা আপনাদের জন্য, যাঁরা এভাবে দেশকে এবং দেশের তরুণসমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে।
উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ
আমার বাবা একজন দিনমজুর। পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে আমরা তিন বোনই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। বাবার পক্ষে পরিবারের দৈনিক চাহিদা মিটিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চালানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। একসময় পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
কী করব না করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এক সিনিয়রের মাধ্যমে জানতে পারি বসুন্ধরা শুভসংঘের ব্যাপারে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় আর্থিক সহায়তা করে তারা। কাউকে যেন অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ করে না দিতে হয় সে জন্য পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ।
আমি বৃত্তির জন্য আবেদন করি। সবকিছু জেনে তারা আমাকে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করে এবং আমার পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়। শুধু তা-ই নয়, আমাকে উৎসাহ দেয়, যেন আমি পড়াশোনা ভালোভাবে চালিয়ে নিয়ে ভবিষ্যতে অসচ্ছল, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াতে পারি। বসুন্ধরা শুভসংঘ, ইমদাদুল হক মিলন স্যার এবং বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ।
আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থীকে নতুন জীবন দান করার জন্য এবং উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে সাহায্য করার জন্য আপনাদের অবদান অবিস্মরণীয়। এখন আমি নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি। পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা, বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘ তাদের কাজের মধ্য দিয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণের মাধ্যম হোক।