মোবাইল ছাড়া মনে হয় সুমনের জীবনে আর কিছু নেই। সারা দিন আজাইরা মোবাইল টিপে সময় কাটে কার। মোবাইল ছাড়া তার মাথা কাজ করে না। সারা দিন অচেনা নম্বরে কল দেয়, মেসেজ পাঠায়। তার বিশ্বাস, একদিন না একদিন, কোনো সুন্দরী মেয়ে তার মেসেজের রিপ্লাই দেবে। আর তখনই শুরু হবে সিনেমার মতো প্রেম। একদিন অবশ্য হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠল। ‘টিং’-একটা মেসেজের রিপ্লাই এলো! নাম, রিপা।
প্রোফাইল পিক দেখে মাথা নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, এত সুন্দরী। সুমনের কল্পনায় ততক্ষণে সে তার জীবনের নায়িকা। দুজনের মধ্যে গল্প জমে ওঠে। মেসেজে মেসেজে যেন বসন্ত তাদের। অবশেষে দুজন ঠিক করল, তাদের বড় এক রেস্টুরেন্টে দেখা হবে। যেদিন দেখা হবে তার আগের দিন থেকেই হাওয়ায় উড়তে লাগল সুমন। লন্ড্রি থেকে নতুন শার্ট আবার ইস্ত্রি করে আনল। আগের দিন রাত থেকেই গায়ে সুগন্ধি মাখা শুরু করল। পরদিন চুলে পাঁচ ধরনের জেল দিয়ে হাজির হলো সে রেস্টুরেন্টে। হাতে গোলাপ। একদম ফিল্মি স্টাইল। কিন্তু এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। মেয়েটির কোনো দেখা নেই। সুমন রিপাকে ফেসবুকে মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে।
-আর কতক্ষণ লাগবে আসতে?
রিপা উত্তর দিল, ‘এই তো এসে পড়েছি!’ ঠিক তখনই তার বন্ধু হাসান এসে ঢুকল রেস্টুরেন্টে।
-এই যে বাপু, কার জন্য অপেক্ষা করছিস?
সুমন পড়ল বেকায়দায়। লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল, ‘ইয়ে মানে, একটা ফ্রেন্ড আসবে।’
হাসান হাসতে হাসতে বলল, ফ্রেন্ডের নাম কী? রিপা? বলেই সে আবার এমনভাবে হেসে উঠল, যেন রেস্টুরেন্টের চেয়ারও কেঁপে উঠল। সুমন থমকে গেল। আমতা আমতা করে বলল, ‘তুই রিপার কথা জানিস কীভাবে?’ হাসান চোখ টিপে বলল, ‘সরি দোস্ত। তুই যাকে এতদিন ‘রিপা’ ভেবেছিস, সে আসলে আমারই ফেইক আইডি। একটু মজা করছিলাম রে ভাই! সুমনের মুখ ভাঁজ হয়ে গেল। মোবাইলটা অফ করে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল সে। সারা দিন মোবাইল টেপার বড় একটা শিক্ষা হলো।
-বাগমারা, রাজশাহী।