আমার এক ছোটভাই বললো, কানে তুলা দিয়ে রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না ভাই। খুব বিপদে আছি, খুবই বিপদে। কী যে করি! আর কানে দেওয়ার মতো এত তুলা-ই বা কোথায় পাই? আমি বললাম, কানে তুলা কেন দিতে চাচ্ছিস একটু বলবি? ছোট ভাই বললো- তুলা কেন দিতে চাইবো না, সেটা বলেন। চারদিক থেকে যে পরিমাণ ভবিষ্যদ্বাণী আসছে! যে যেভাবে পারছে ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে যাচ্ছে। আর এই ভবিষ্যদ্বাণী সরাসরি এসে আঘাত করছে কানের পর্দায়। কিন্তু এটা তো হতে দেওয়া যায় না। অবশ্যই কানের পর্দা বাঁচাতে হবে। এই জন্য তুলা গুঁজে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। আমি এবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। এরপর যখন চিন্তা খানিকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হলাম, তখন জানতে চাইলাম, এই যে বললি চারদিক থেকে নাকি তোর কানে ভবিষ্যদ্বাণী আসছে, কী ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী আসছে, একটু শুনি তো! ছোটভাই বললো, কয়টা আর শুনবেন? তবু গতকালেরটা একটু শোনাই। আমার স্ত্রী বললো, তার নাকি ডান হাত চুলকাচ্ছে। অতএব, অচিরেই প্রচুর টাকা-পয়সা আসবে। আমি বললাম, এটা তো ভালো খবর। তোর তো খুশি হওয়া উচিত। ছোটভাই বললো, আগে পুরোটা শোনেন। তারপর বলেন খুশি হওয়া উচিত নাকি বেজার হওয়া উচিত। স্ত্রীর ডান হাতের চুলকানি অব্যাহত থাকল। সে ধরেই নিলো যেহেতু দীর্ঘক্ষণ ধরে হাতটা চুলকাচ্ছে, অতএব, প্রচুর টাকা আসবে। কিন্তু একটু পরেই দেখা গেল হাতে ছোট ছোট গোটা উঠেছে। তার মানে এলার্জি বা এই জাতীয় কোনো সমস্যা। সমস্যা এখানেই শেষ না। এই অবস্থায়ই সে হাতে মেহেদি দিলো। কারণ, তার একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। হাত একটু রং না করলে কেমন দেখায়! ব্যস, মেহেদি দেওয়ার পর যেই চুলকানি উঠলো, গায়ের জামা, বিছানার চাদও, হাত মোছার তোয়ালে সবকিছু মোটামুটি লালে লাল হয়ে গেল। বোঝেন তাহলে ভবিষ্যদ্বাণীর কী পরিণতি! আমি বললাম, এই জন্যই এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্বাস করা উচিত না। জ্যোতিষীরা হাত দেখে কিংবা টিয়া পাখির মাধ্যমে খুব ভালো ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে বলে শুনেছি। ছোটভাই বললো, আজকাল আর কারও ভবিষ্যদ্বাণীই মেলে না ভাই। যেমন কিছুদিন আগে এক জ্যোতিষী টিয়া পাখি বলল, আমার যাত্রা নাকি শুভ। কিন্তু এই পরদিনই এক জায়গায় যাওয়ার পথে রিকশা থেকে পড়ে পা মচকে গেল। এর একদিন পর আবার গেলাম ওই টিয়া পাখির কাছে। বললাম, আমার যাত্রা যদি শুভ হয়, তাহলে রিকশা থেকে পড়লাম কেন? টিয়া পাখি সাইডে সরিয়ে এবার জ্যোতিষী বলল, আপনি আমার কথা বুঝতে পারেননি। আমি বলেছি যাত্রা শুভ। তবে এই যাত্রা না। যাত্রাপালা। এখন শীত মৌসুম তো! এই জন্য যাত্রা শুভ। মানে গ্রামে গেলেই যাত্রা দেখতে পারবেন। আমি বললাম, এইভাবে কথা ঘোরানো ঠিক না। অবশ্য ভবিষ্যদ্বাণী না মিললে আবার প্রবলেম আছে। সেদিন, স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় বলেছিলাম, আমি চাইলেই তোমার চেয়ে হাজারগুণ সুন্দরী মেয়ে পাবো। এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম কারণ, জ্যোতিষী বলেছে আমার রোমান্স নাকি শুভ। এখন আর বাসায় ঢুকতে পারছি না। যে জ্যোতিষী বলেছিল রোমান্স শুভ, সেও পলাতক।