আমার এক ছোট ভাই বললো, ভাই, একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমাকে অভিনন্দন জানাতে পারেন। আমি বললাম, তুই তো কদিন পরপরই প্রকল্প হাতে নিস। যেসব প্রকল্পের কোনো আগা-মাথা থাকে না। শেষ পর্যন্ত ডাব্বা মারিস। সুতরাং প্রকল্প হাতে নিয়েছিস বলেই তোকে অভিনন্দন জানাবো, অভিনন্দন এত সস্তা না। আরে ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝবো, তারপর দেখবো অভিনন্দন জানানো যায়, নাকি যায় না। ছোটভাই বললো, এবারের প্রকল্পটা খুবই যৌক্তিক প্রকল্প। মানে খুবই সময়োপযোগী প্রকল্প আরকি। সেটা হচ্ছে, কাঠের চশমা প্রকল্প। আমি এবার প্রায় আঁতকে উঠলাম। বলিস কী! কাঠের চশমা প্রকল্প মানে? এইটা আবার কী ধরনের প্রকল্প হয়? ছোটভাই বললো, ভাই, আমাদের চারপাশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেগুলো যত কম দেখা যায়, ততই ভালো। তবু আমরা দেখি। দেখতে বাধ্য হই। এতে গায়ে পড়ে গিয়ে ঝামেলায় জড়াই। কিন্তু কাঠের চশমা চোখে থাকলে হবে কি, এত কিছু দেখতেও হবে না, ঝামেলায়ও জড়াতে হবে না। আমি বললাম, তুই যা-ই বলিস, এ ধরনের আজগুবি প্রকল্প কেউ ভালোভাবে নেবে না। ছোটভাই বললো, প্রকল্পটাকে কোনোভাবেই আজগুবি প্রকল্প বলবেন না ভাই। আরে কেন বুঝতে পারছেন না, সারা দিন ফেসবুক চালাতে গিয়ে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমাদের চোখের বারোটা বেজে যাওয়ার মতো অবস্থা। কাঠের চশমাটা পরা থাকলে অন্তত চোখ বাঁচবে। এবার আমি আর কোনো কথা বললাম না। কথা বললাম একদিন পর। কারণ, ছোটভাইকে চা-স্টলে একা পেয়ে গেলাম। আমি বললাম, তোর প্রকল্পের কী খবর? ছোটভাই বললো, কাঠের চশমা প্রকল্পটা আপাতত বাদ দিয়েছি। ভাবছি এই ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। আরও নরম কোনো জিনিসের প্রকল্প হাতে নেওয়া যায় কি না, সেই পরিকল্পনা চলছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, তোর কথা ঠিক বুঝলাম না। নরম কোনো জিনিসের প্রকল্প মানে? ছোটভাই বললো, না, মানে কাঠ জিনিসটা খুব শক্ত তো! আর সেটা দিয়ে চশমা বানালে তো জিনিসটা মোটামুটি ভালোই শক্ত হয়ে যায়। মানুষ করছে কী, কোনো কারণে মতের অমিল হলে এই কাঠের চশমা দিয়ে বাড়ি মারছে বা চশমাটা ছুড়ে মারছে। এজন্য কাঠের পরিবর্তে নরম কোনো জিনিসের প্রকল্পের কথা ভাবছি। আচ্ছা ভাই, তুলা দিয়ে কি চশমা তৈরি করা যায়? করা গেলে তুলার চশমা প্রকল্প চালু করতাম আরকি। আমি বললাম, তুলার চশমা প্রকল্প চালু করা যাক বা না যাক, কানে তুলা গোঁজার প্রকল্প ইতোমধ্যে চালু হয়ে গেছে। এজন্য তোর এসব ফালতু কথা আমাকে শুনতে হয়নি- বলেই আমি কানে গুঁজে রাখা দুই টুকরো তুলা দেখালাম।