আমার এক ছোটভাই বললো- আর পারি না। আমার বাসায় যে খালা রান্না করেন, সেই খালাকে হালকা ধমক দিয়েছিলাম। বিনা কারণে ধমক দিইনি কিন্তু। প্রতিদিনই তরকারিতে এত বেশি লবণ দেন, মুখে নেওয়া যায় না। এর আগে তাকে অনেকবার বলেছি লবণ যাতে কম দেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমার কথা এক কান দিয়ে শুনেছেন, আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছেন। তারপর বাধ্য হয়ে যেই সেদিন তাকে হালকা ধমক দিলাম, উনি কর্মসূচি দিয়ে বসলেন। আশপাশের বাসার যত খালা আছেন তাদের দাবি একটাই- তরকারিতে লবণ কম হোক বা বেশি হোক, এটা নিয়ে কথা বলা যাবে না। আমি বললাম- এখন থেকে লবণ কম দিক বা বেশি দিক, দিক বা না দিক, টুঁ শব্দটাও করবি না। ছোটভাই বললো- ভোগান্তির কথা যেহেতু আসলোই, আরেকটা কর্মসূচির কথা বলি। আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় যে হোটেল থেকে পুরি কিনি, দুই দিন আগে হোটেলে গিয়ে দেখি মালিক বিরাট প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি জানতে চাইলাম, এত ঘটা করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন যে? দোকানদার বললো, কর্মসূচি আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কিসের কর্মসূচি? দোকানদার বললো, বিরাট ঝামেলায় আছি রে ভাই। আপনে তো পুরি নিয়ে বাসায় চলে যান। আপনের বিষয়টা ভিন্ন।
তাছাড়া আপনে আমার দোকানে কোনো দিন ভাত খান নাই। এই জন্য বিষয়টা আপনে জানেন না। আমি বললাম, জানি না তো কী হয়েছে। জানতে চাই। এবার দোকানদার বললো, যারা ভাত খায়, তারা ৫০ টাকার তরকারি নিয়ে পাঁচবার, ছয়বার থোড়া চায়। থোড়া বোঝেন তো? অতিরিক্ত তরকারি আর কি। দেখা যায়, থোড়া দিতে আমার স্টাফ কাহিল হইয়া যায়। কিছু বলতে গেলে কাস্টমার যায় ক্ষেইপ্যা। এই জন্য আমি এবং আশপাশের কয়েকটা হোটেলে যারা কাজ করি তারা কর্মসূচি দিছি। কর্মসূচির মূল প্রতিপাদ্য হইতাছে, একবারের বেশি থোড়া দেওয়া হইবো না। বলেই তিনি চলে গেলেন কর্মসূচিতে।
এদিকে আমার মাথায় ঘুরতে লাগলো- ‘থোড়া’ শব্দটা। এরপর ঘুরতে লাগলো থোড়াবিষয়ক গান- ‘পাগলু, থোড়া সা করলে রোমান্স...’। ছোটভাই বললো- আজকাল যখন তখন কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে, যেখানে সেখানে কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে বাঁচার কি কোনো পথ নেই? আমি বললাম- কেন থাকবে না, অবশ্যই আছে। এসব কর্মসূচির যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে আমরা যারা সচেতন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তারপর ব্যবস্থা নিতে হবে। ছোটভাই জানতে চাইলো- কী ধরনের ব্যবস্থা? আমি বললাম- কর্মসূচি দিতে হবে। আর এই কর্মসূচির প্রতিপাদ্য হবে, আমরা কোনো ধরনের কর্মসূচি চাই না। ঠিক আছে না?