মানুষ ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে বসবাস করতে পারে—এমন ধারণা এখন আর অসম্ভব মনে করা হয় না। স্পেসএক্স ও টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক ২০৩০ সালে মানুষকে নিয়ে মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। আর সেই সম্ভাব্য বসতি গড়ার আগেই বিজ্ঞানীরা ভাবতে শুরু করেছেন, মঙ্গলে পৌঁছালে সময়ের হিসাব কি পৃথিবীর মতোই থাকবে, নাকি বদলাতে হবে?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলে দিনের হিসাব পৃথিবীর মতো নয়। মঙ্গল গ্রহে ঘড়ি প্রতিদিন পৃথিবীর তুলনায় ৪৬৭ মাইক্রোসেকেন্ড দ্রুত চলবে। এটি খুব ছোট সময়—চোখের পলকেরও হাজার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই ছোট পার্থক্য বড় সমস্যায় ফেলতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নেভিগেশন প্রযুক্তিকে। তাই মঙ্গল গ্রহের জন্য নতুন টাইম জোন বা নতুন সময় মান (Time Standard) তৈরির কাজ চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ক্ষুদ্র সময়–পার্থক্য বছরে বড় হয়ে ওঠে। উদাহরণ হিসেবে তারা জানান, প্রতি দশকে মঙ্গল পৃথিবীর সময়ের থেকে প্রায় ১.৭ সেকেন্ড এগিয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার সূত্র (General Relativity) দিয়ে। সূত্র অনুযায়ী, মহাবিশ্বে সময় সব জায়গায় একই গতিতে চলে না। যেখানে মাধ্যাকর্ষণ বেশি, সেখানে সময় ধীরে চলে; আর মাধ্যাকর্ষণ কম হলে সময় একটু দ্রুত এগোয়।
মঙ্গলে মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ দুর্বল। তাই সেখানে থাকা মহাকাশচারীদের সময়—খুব সামান্য হলেও—পৃথিবীর মানুষের চেয়ে দ্রুত অতিক্রান্ত হবে। অর্থাৎ তারা খুব অল্প হলেও বেশি বয়সী দেখাবে।
আরও একটি জটিলতা হলো মঙ্গলের কক্ষপথ। পৃথিবী ও চাঁদ যেভাবে বৃত্তাকার পথে ঘোরে, মঙ্গল তেমন নয়। সূর্যের টান ও বৃহস্পতি–শনি গ্রহের বিশাল মাধ্যাকর্ষণের কারণে মঙ্গল ডিম্বাকৃতি পথে ঘুরে। ফলে গ্রহটিতে মাধ্যাকর্ষণ কখনো বাড়ে, কখনো কমে—আর তাতেই ঘড়ির গতি সামান্য বদলে যায়।
হিসাব মতে, মঙ্গলের ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ির থেকে মাত্র ১ মিনিট এগিয়ে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩৪৪ বছর। দৈনন্দিন জীবনে এ পার্থক্য তেমন বোঝা যাবে না। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা, মহাকাশ নেভিগেশন বা রোবট নিয়ন্ত্রণ—এসব ক্ষেত্রে সময়ের ক্ষুদ্রতম ভুলও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
এ কারণেই বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলে মানুষের বসতি হলে সেখানে সময় গণনার জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন মান বা নতুন ‘মঙ্গল সময়’ তৈরি করা জরুরি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল