বিশ্বজুড়ে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ১০০ কোটিরও বেশি নারী শৈশবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রিয়জনের কাছ থেকে সহিংস আচরণের শিকার হয়েছেন প্রায় ৬০ কোটির বেশি নারী।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী সঙ্গীর কাছে নিগৃহীত হয়েছেন। এসব অঞ্চলে এইচআইভি ও দীর্ঘমেয়াদী রোগের হার বেশি হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ভারতে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী অন্তত ২৩ শতাংশ নারী সঙ্গীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আবার ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের ৩০ শতাংশের বেশি এবং পুরুষদের ১৩ শতাংশের শৈশবে যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
গবেষকেরা গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (জিবিডি) স্টাডি ২০২৩-এর তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এটি ‘সময় ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ক্ষতির সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিমাপক’ হিসেবে বিবেচিত। জিবিডি স্টাডিটি সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষকরা জানান, বিশ্বব্যাপী ২০২৩ সালে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৬০ কোটি নারী কখনো না কখনো আইপিভির শিকার হয়েছেন। আর ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ১০০ কোটিরও বেশি নারীর শৈশবে যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
যৌন সহিংসতার ফলে নারীদের মধ্যে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও বিষণ্নতা তৈরি হয়। শৈশবে যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতা নারীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, মাদক ব্যবহারজনিত ব্যাধি এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ অন্তত ১৪টি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
গবেষকেরা বলেন, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলা করা শুধু মানবাধিকারের বিষয় নয়; এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার। এর মাধ্যমে লাখো মানুষের জীবন বাঁচানো যেতে পারে। নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া হলে তা একটি সহনশীল সমাজ গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে।
গবেষকরা বলেছেন, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবেলা কেবল মানবাধিকারের বিষয় নয় বরং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার যা লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচাতে পারে, মানসিক স্বাস্থ্যের ফলাফল উন্নত করতে পারে এবং স্থিতিশীল সম্প্রদায় গড়ে তুলতে পারে।
তারা বলেছেন, সহিংসতার কারণে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি কমাতে আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ, লিঙ্গ সমতা প্রচার এবং ভুক্তভোগীদের জন্য সহায়তা পরিষেবা সম্প্রসারণের মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর এই গবেষণার ফলাফল জোর দেয়।
সূত্র: এনডিটিভি।
বিডি প্রতিদিন/কামাল