২০১৬ সালের জুনে শিশুদের জন্য মাত্র ৯০ সেকেন্ডের একটি গান প্রকাশের অনুমোদন দিয়েছিলেন কিম মিন-সিওক, পিঙ্কফং-এর প্রধান নির্বাহী। তখন তিনি বুঝতেও পারেননি যে সামান্য ওই কাজই তাদের জন্য তৈরি করবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন। ‘বেবি শার্ক’ নামের সেই গানটি পরে ইউটিউবে ১৬ বিলিয়ন, অর্থাৎ ১৬০০ কোটিরও বেশি ভিউ পেয়ে সর্বকালের সর্বাধিক দেখা ভিডিও হয়ে ওঠে।
বাচ্চাদের কাছে গানটি যেমন দ্রুত জনপ্রিয় হয়, তেমনি এটি পিঙ্কফং-এর জন্য তৈরি করে কয়েকশ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসার পথ। কিম মিন-সিওক, ডংউ সন, সহকর্মীমাত্র তিনজন কর্মচারী নিয়ে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করেছিল স্মার্টস্টাডি। ছোট্ট অফিসে কাজ করতেন তারা, যেখানে শুরুতে বেতন পাওয়ার আশা পর্যন্ত ছিল না। পরে তারা ছোট শিশুদের দিকে মনোযোগ সরিয়ে সহজ, শিক্ষামূলক কনটেন্ট তৈরি শুরু করেন, আর সেখান থেকেই আসে ‘বেবি শার্ক’।
কোম্পানিটি বৃহত্তর রূপ নিতে নিতে টোকিও, সাংহাই, লস অ্যাঞ্জেলেসেও অফিস চালু করে, কর্মচারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪০। মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে অভিষেকের সময় পিঙ্কফং-এর শেয়ারের দাম প্রথম দিনেই ৯ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়, ফলে কোম্পানিটির মূল্য এখন ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ওপরে।
গানটির উৎস ১৯৭০-এর দশকের মার্কিন একটি লোকগান। বিশ্লেষকদের মতে, “বেবি শার্ক, ডু ডু ডু…” —এই পুনরাবৃত্তিমূলক অংশটাই ছোটদের আকৃষ্ট করে, যদিও অনেক প্রাপ্তবয়স্কের কাছে এটি বিরক্তিকর মনে হয়। কিম মিন-সিওক বলেন, এটি এক ধরনের কে-পপ স্টাইল—দ্রুতগতি, ছন্দময়তা আর আসক্তিকর পুনরাবৃত্তি ছোটদের মনে রাখা সহজ করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি নাচের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার পর ভাইরাল হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে বেবি শার্ক ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও হয়ে ওঠে। প্রকাশের পর শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটির মোট আয়ের প্রায় অর্ধেক এসেছিল এই গান থেকে।
২০১৯ সালে কপিরাইট চুরির অভিযোগে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে পিঙ্কফং, তবে কোম্পানিটি জানায় গানটি লোকসঙ্গীতের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তাদের পক্ষে রায় দেয়।
শিশুদের একই ভিডিও বারবার দেখার প্রবণতার কারণেই পিঙ্কফং-এর কনটেন্টগুলো দ্রুত এগিয়েছে। এখন কোম্পানিটির আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে বেবি শার্ক থেকে, আর প্রায় ৪০ শতাংশ আসে বেবেফিন থেকে। তবে অভিভাবকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থেকেছে—অনেকে শিক্ষামূলক দিকটির প্রশংসা করলেও কেউ কেউ মনে করেন, এটি বাচ্চাদের জন্য অতিরিক্ত উদ্দীপক।
সামনে কোম্পানির লক্ষ্য হচ্ছে আরও চরিত্র তৈরি করা ও চলচ্চিত্র-ভিত্তিক কনটেন্ট বাড়ানো। শেয়ারবাজারে প্রবেশের সময় তারা প্রায় ৫২ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে, যা ব্যবহার হবে নতুন প্রকল্পে। কিম মিন-সিওক আশা দেখেন। তবে বিনিয়োগকারীদেরও বোঝাতে হবে যে পিঙ্কফং কেবল একবারের জন্য তৈরি করা ‘একটি হিট’-এর প্রতিষ্ঠান নয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/আশিক