রাশিয়ার দুর্ভেদ্য ও বরফাচ্ছন্ন পূর্বাঞ্চলে সাইবেরিয়ান বাঘ রক্ষায় যে দীর্ঘ সংগ্রাম হয়েছে, সেই অনন্য গল্প উঠে এসেছে সাম্প্রতিক প্রকাশিত বই ‘Tigers Between Empires’-এ।
বইটি লিখেছেন মার্কিন বন্যপ্রাণ গবেষক জোনাথন স্ল্যাট। তিনি বইটিকে বলেছেন বিশ্বের দীর্ঘতম বাঘ গবেষণা প্রকল্প- সাইবেরিয়ান টাইগার প্রজেক্টের পূর্ণ ইতিহাস। এই প্রকল্প শুরু হয় ১৯৯২ সালে।
যখন এই প্রকল্প শুরু হয় তখন মার্কিন বিজ্ঞানীদের কাছে বন্যপ্রাণ ট্র্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত রেডিও ও জিপিএস কলার ছিল, কিন্তু রুশ বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না। দুই দেশের বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে কাজ করে বাঘকে নিরাপদে ধরার, চেতনানাশক দেওয়ার ও কলার পরানোর পদ্ধতি শেখেন। মাঠ পর্যায়ে রুশ বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা আর আমেরিকানদের প্রযুক্তি- দুয়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে সফল গবেষণা দল।
১৯শ শতকের মাঝামাঝি রাশিয়ায় প্রায় ৩,০০০ বাঘ ছিল; ১৯৩০-এর দশকে সেই সংখ্যা নেমে আসে মাত্র ৩০-এ। পরে কিছুটা বাড়লেও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর দারিদ্র্য ও শিকার বেড়ে যায়। প্রকল্পের প্রথম দশকে দেখা যায়- ৭৫ শতাংশ বাঘ মারা গেছে শিকারিদের হাতে।
প্রকল্পের মাধ্যমে ১১৪টি বাঘ ধরা ও ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের গতিবিধি দেখে জানা যায়, বাঘের শিকার, খাদ্যাভ্যাস, আর মায়ের থেকে মেয়ের উত্তরাধিকার পাওয়ার মতো (territory inheritance) গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই গবেষণার ভিত্তিতে প্রায় ২০০ বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকাশ হয় এবং নতুন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়।
বইটিতে বিশেষভাবে উল্লেখ আছে ‘ওলগা’ নামের একটি বাঘিনীর কথা, যাকে ১৩ বছর অনুসরণ করা হয়েছিল। এত দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ গবেষকদের বাঘের ব্যক্তিগত আচরণ বোঝাতে সাহায্য করেছে। তবে বিদেশি সংস্থার ওপর রাশিয়ার কঠোর নজরদারি বাড়ায় ২০১৬ সালের পর প্রকল্পের প্রভাব কমে যায়। ইউক্রেন যুদ্ধের পর বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা নিষিদ্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়।
তবুও স্ল্যাট আশাবাদী। তার মতে, রাশিয়া ও চীনের যৌথ সংরক্ষণ উদ্যোগ- যেমন দুই দেশের সীমান্তে গড়ে ওঠা ‘ল্যান্ড অব বিগ ক্যাটস’ ভবিষ্যতে বাঘ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
স্ল্যাট মনে করিয়ে দিয়েছেন- সংরক্ষণের সাফল্য মানেই কাজ শেষ নয়। বাঘ একসময় বিলুপ্তির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েছিল; তাই নিয়মিত নজরদারি জরুরি, নইলে বিপদ আবার ফিরে আসতে পারে।
তথ্য সূত্র - সিএনএন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল