নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, ১৪শ শতকের ব্ল্যাক ডেথ বা ভয়াবহ প্লেগ মহামারির পেছনে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৩৪৭ থেকে কয়েক বছরের মধ্যেই এই প্লেগ ইউরোপে কয়েক কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটায় এবং কিছু এলাকায় জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
ইউরোপে প্লেগ কীভাবে এত দ্রুত ছড়াল—এ নিয়ে বহুদিন ধরেই বিতর্ক ছিল। গবেষকরা এবার স্পেনের পিরেনিস পর্বতের গাছের বলয় (tree rings—গাছের কাণ্ডের বয়স অনুযায়ী জন্মানো বলয়) বিশ্লেষণ করে নতুন তথ্য পেয়েছেন। তারা দেখেছেন, ১৩৪৫ থেকে ১৩৪৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ইউরোপে অস্বাভাবিক ঠান্ডা ও ভেজা গ্রীষ্ম ছিল।
গবেষকদের মতে, এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া এক বা একাধিক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে সূর্যালোক কমে যাওয়ার কারণে হয়েছিল। ফলে তাপমাত্রা কমে যায়, ফসল নষ্ট হয় এবং খাদ্য সংকট দেখা দেয়।
এই সংকট মোকাবিলায় ইতালির শক্তিশালী নগররাষ্ট্রগুলো—ভেনিস, জেনোয়া ও পিসা—দূরবর্তী বাণিজ্যপথ ব্যবহার করে কৃষ্ণসাগর ও মধ্য এশিয়া থেকে শস্য আমদানি শুরু করে। কিন্তু এই শস্যবাহী জাহাজেই লুকিয়ে এসেছিল সর্বনাশের প্রকৃত বহনকারী—ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস জীবাণুবাহী (plague bacterium) ইঁদুর ও তাদের গায়ে থাকা পিঁপড়া (fleas)। এখান থেকেই প্লেগ রোগ ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
মাত্র ছয় বছরে ইউরোপে প্রায় ২ থেকে ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। ইতিহাসে এটি মানবজাতির সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারিগুলোর একটি।
গবেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের সময়ে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক উলফ বুয়েন্টজেন বলেন, গ্লোবালাইজেশনের যুগে জলবায়ু পরিবর্তন যে নতুন মহামারি ডেকে আনতে পারে—কোভিড-১৯ আমাদের সেটাই আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। গবেষণাটি প্রকাশ হয়েছে কমিউনিকেশনস আর্থ এন্ড এনভাইরনমেন্ট জার্নালে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল