জনপ্রিয় ‘হৃদয়ের কথা’ ছবির ‘ভালোবাসবো বাসবো রে’ গানটির দৃশ্যায়ন নিয়ে মজার একটি স্মৃতির কথা জানালেন নির্মাতা এস এ হক অলিক। তিনি ভাবনার সাগরে ডুব দিয়ে বলেন, ‘ঠিক করলাম রাঙামাটির প্যাদা টিং টিং নামক স্থানে আমরা এ গানের শুট করব। কিন্তু যেদিন টিম নিয়ে সেখানে গেলাম দেখলাম গাছগাছালি বেড়ে রীতিমতো জঙ্গলে পরিণত হয়েছে জায়গাটি। মানে শুটিং করার মতো আর কোনো অবস্থা নেই। তখন চরম টেনশনে পড়ে গেলাম কী করব। হঠাৎ নায়ক রিয়াজ চিৎকার করে বলে উঠল অলিক ভাই ওই যে দেখেন একটি ঝরনা। আমরা সেখানে তো এ গানের শুটিং করতে পারি। তারপর আমরা সেখানেই শুটিং করলাম। সেই ঝরনাটি এখন আর নেই। হৃদয়ের কথাই একমাত্র ছবি যার শুটিং সেখানে হয়েছিল। ওখানে কাজ করতে গিয়ে আরেকটি বিপত্তি ঘটেছিল। ঝরনার নিচে তিনটি পাথর ছিল। রিয়াজ ও পূর্ণিমা সেই পাথরের ওপরে বসবে এবং রিয়াজের কোলে পূর্ণিমা মাথা রাখবে। কিন্তু পাথরগুলো এতই পিচ্ছিল ছিল যে, পূর্ণিমা কোনোভাবেই সেই পাথরের ওপর বসতে পারছিল না। তখন রিয়াজ তার পরনে থাকা গেঞ্জি খুলে পাথরের ওপর বিছিয়ে দিল আর পূর্ণিমা তার ওপর বসার দৃশ্যায়ন সম্পন্ন হলো।’ নির্মাতা বলেন, তবে মজার কথা হলো- দর্শক বুঝতেই পারল না যে, পূর্ণিমা গেঞ্জির ওপর বসা। রিয়াজ-পূর্ণিমা অভিনীত এই সিনেমাটির নির্মাণ ছিল যুগের চেয়ে এগিয়ে। বিশেষ করে সিনেমার দুটি গান ‘ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে’ এবং ‘যায় দিন যায় একাকী’ এখনো সমান জনপ্রিয়। ২০০৬ সাল, সেই বছরের ১৮ আগস্ট মুক্তি পেল এটি। মৌলিক গল্প, রোমান্টিক আমেজ, জনপ্রিয় জুটির নান্দনিক অভিনয়, শ্রুতিমধুর সব গান, নির্মাণের মুনশিয়ানায় ‘হৃদয়ের কথা’ চমকে দিল ইন্ডাস্ট্রিকে। সব শ্রেণির মানুষ হলে ফিরল উৎসব আমেজে। বিশেষ করে বাংলা গানের ভুবনে তখন ভীষণ খরা। আধুনিক গানের যে জনপ্রিয়তা সেটি প্রায় হারাতে বসেছিল। ফিতার ক্যাসেট ছেড়ে সিডিতে ধাবমান হওয়া ইন্ডাস্ট্রি ভুগছিল নতুন কিছু গ্রহণের সিদ্ধান্তহীনতায়। সেই সময়টাতে হাবিব ওয়াহিদ যেন জাদুর পরশ নিয়ে এলেন ‘হৃদয়ের কথা’ ছবিতে ‘ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু’ গানটি নিয়ে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের কাছে তো বটেই, ভিন্ন আমেজ আর হৃদয়ছোঁয়া সুরের কাছে মন সঁপেছিলেন সব বয়সের শ্রোতাই। তখন প্রায় সবখানেই বেজেছে এ গানটি। পাশাপাশি এসআই টুটুলের কণ্ঠে ‘যায় দিন যায় একাকী’ গানটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মনির খান ও কনকচাঁপার কণ্ঠে ‘কতটা বছর এই সুখ রবে গো’তেও ছিল অন্যরকম আবেদন। এ গানগুলো বাংলা ছবির গানে নতুন মাত্রা যোগ করে দিল। বাংলা সিনেমার গান ফিরল আবার মধ্যবিত্তদের অন্দরমহলে। হাবিব ওয়াহিদ ‘ভালোবাসবো বাসবো রে’ গানটি দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গেলেন। অন্যদিকে ‘যায় দিন যায় একাকী’ গানটি এসআই টুটুলকে দর্শকপ্রিয়তার নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়। ছবির নির্মাতা এস এ হক অলিক জানান, যারা এ ছবির গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল যার যার কাজ ভালো করার। আর সেই চিন্তা থেকেই দীর্ঘ খরার পর বাংলা ছবির দর্শক পেল অসাধারণ কিছু গান।