প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসা নাঈম-শাবনাজ জুটিতে এখনো উচ্ছ্বসিত দর্শক। তাঁদের কাছে প্রশ্ন ছিল পর্দা থেকে জীবন জুটি হওয়াটা কীভাবে সম্ভব হলো? এমন প্রশ্নে এখনো লজ্জার আভা ফুটে ওঠে এই সুখী দম্পতির চোখেমুখে। নাঈম স্মিত হেসে বললেন, আমরা জুটি বেঁধে অনেক ছবিতে কাজ করে ফেলেছি। ভাবলাম আমাদের জুটির রসায়ন পাকা করতে আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক আরও উন্নত করা দরকার। ১৯৯৪ সাল। সিলেটে এহতেশাম সাহেবের ‘চোখে চোখে’ ছবির শুটিংয়ে গেছি। যে বাংলোতে আমরা উঠেছি সেই বাংলোর জিএম ছবির টিমকে নিমন্ত্রণ জানালেন। সেখানে শাবনাজের বাবাসহ সবাই উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনের এক ফাঁকে আমি শাবনাজকে ডেকে বাইরে নিয়ে যাই। নিঃসংকোচে তাকে মনের কথা খুলে বলি। শাবনাজের কাছে জানতে চাইলাম জবাবে আপনি কী বলেছিলেন, লজ্জা জড়ানো হাসিতে তাঁর কথায়, ওর কাছ থেকে এমন প্রস্তাব পাওয়াটা আমার জন্য কোনো সারপ্রাইস ছিল না। আমিও মনে মনে ওকে ফিল করতাম। একটানা তিন বছর একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে একটা গভীর বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। এ সম্পর্ক যদি দুজনের মধ্যে নিবিড় আর নির্ভরযোগ্য করা যায় তাতে ক্ষতি কী? তাই তার প্রস্তাবে সম্মত হতে কার্পণ্য করিনি। ১৯৯৪ সালেই গাঁটছড়া বাঁধলাম। তার পরের ইতিহাস তো সবারই জানা। এখনো বন্ধুর বাঁশি বাজে আমাদের কানে কানে... ও হ্যাঁ, নাঈম কিন্তু ভালো বাঁশি বাজাতে পারে। সব বাদ্যযন্ত্রেই রয়েছে তার দক্ষতা। শাবনাজের এ কথার প্রমাণ পেলাম তাদের ড্রইংরুমে পরম যত্নে সাজিয়ে রাখা এক গুচ্ছ বাঁশের বাঁশি দেখে। চলচ্চিত্র থেকে সরে দাঁড়ানো কেন? এমন প্রশ্নে দুজনের চোখেমুখে বিষাদের ছায়া বহুদূর থেকেও আঁচ করা যায়। অনেকটা উদাস হয়ে ওঠা নাঈম বলেন, ১৯৯৪ সালটা আমার জীবনের জন্য একটি অনেক কষ্টের বছর। এ বছর প্রথম প্রযোজনায় এলাম। ‘আগুন জ্বলে’ শিরোনামের একটি ছবি নির্মাণ করলাম। ছবিটি সফলতার মুখ দেখল না। চরম আর্থিক ক্ষতির শিকার হলাম। এরপরই প্রিয় বাবাকে হারালাম। এ দুই ঘটনা, বিশেষ করে বাবাকে হারানোর কষ্ট আমাকে চলচ্চিত্র বিমুখ করে দেয়...বলতে বলতে নাঈমের চোখের কোণে বেদনার অশ্রু জমে উঠল। নিজেকে কিছুটা সামলে উদাস কণ্ঠে নাঈম বলে চললেন বাবাকে হারানোর যন্ত্রণাটা এখনো বুকে বড় বেশি বাজে। আমি ছিলাম বাবার ছায়া। আমাকে ছাড়া বাবা, বাবাকে ছাড়া আমি ছিল অকল্পনীয়। এমন সম্পর্ক আর কারও আছে বলে আমার জানা নেই। সেই প্রিয় বাবা যখন হঠাৎ আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন তখন নিজেই নিজের জীবনের প্রতি মায়া হারিয়ে ফেললাম। হয়তো সেই শোকে আমিও মারা যেতাম। কিন্তু শাবনাজের অবর্ণনীয় সান্ত্বনা আমার বেঁচে থাকার উপায় হয়ে দাঁড়াল। ওর সাপোর্টের কারণে আর বাবার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এখনো বেঁচে আছি আমি। কষ্টের গল্পে ভারী হয়ে ওঠা উপরিবেশ হালকা করতে বিচক্ষণ শাবনাজ বলে উঠল, জানেন আমাদের দুজনার পরিবারের মধ্যে অনেক মিল আছে। এই যেমন ধরুন দুজনের নানার নাম প্রায় এক। ওর নানার নাম মেহেদী আলী খান পন্নী। আর আমার নানা হলেন খন্দকার আলী মেহেদী। নাঈমের বাবা হলেন খাজা মুরাদ। আমার বাবার নাম স ম হুমায়ন। আমার বাবা তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সঙ্গে গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। আমাদের বাড়ি বিক্রমপুর। নাঈমের নানাবাড়ি টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। করোপিটয়ার বিখ্যাত পন্নী পরিবারের মেয়ে আসিয়া পন্নী হলেন নাঈমের আম্মা। আর আমার আম্মুর নাম আঞ্জুমান নাহার। আমরা তিন বোন। ছোট বোন তাহমিনা সুলতানা মৌ টিভি নাটকে অভিনয় আর ছোট বোন শাহনাজ সোনিয়া হাউস ওয়াইফ। নাঈমরা এক ভাই এক বোন। ওর বোন জিবা ইসলাম একজন ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফার। আমাদের দুই মেয়ে। নামিরা ও মাহাদিয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি বড় মেয়ে ভালো পেইন্টিং করে ও ফুটবল খেলে। ছোট মেয়ে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ইতোমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। বলতে পারেন আমরা নিখাদ একটি সুখী পরিবার।