শীত পড়তে শুরু করেছে। আর শীতে শিশুরা একটু বেশিই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে দুশ্চিন্তা না করে এ সময়টাতে শিশুদের বিশেষ পরিচর্যা নিলে শীতেও আপনার সোনামণি থাকবে সুস্থ।
চিকিৎসকদের মতে- শীতে শিশুরা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালি থাকার কারণেই মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টা অভিভাবকদের কিছুটা সচেতন থাকতে হবে।
হালকা গরম পানি
শিশুদের ক্ষেত্রে হালকা কুসুম গরম পানি পান করানো উচিত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দাঁত ব্রাশ করা, হাত-মুখ ধোঁয়া, খাওয়াসহ শিশুদের নানা কাজে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে। শীতে শিশুকে গোসলের সময় শরীরের কাছাকাছি তাপমাত্রার হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। তবে নবজাতক কিংবা ঠাণ্ডার সমস্যা আছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।
উষ্ণ পোশাক
শিশুদের উলের পোশাক পরিয়ে রাখা উচিত। তবে চিকিৎসকের মতে, শিশুদের সরাসরি উলের পোশাক পরানো ঠিক নয়। সুতি কাপড় পরিয়ে তার ওপর উলের পোশাক পরানো উচিত। এতে উলের ক্ষুদ্র লোমে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। সুতি কাপড় পরিয়ে তার ওপর উলের পোশাক পরানো উচিত এবং পোশাকটি যেন নরম কাপড়ের হয়। শিশুদের রাতে ঘুমানোর আগে হালকা ফুল হাতা গেঞ্জি পরিয়ে রাখুন এবং সকালে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও বিকালের দিকটাতে হালকা শীতের পোশাক পরিয়ে রাখতে পারেন।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
শীতে ছোটবড় সবার ত্বকেরই অনেক বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। আর শিশুর ত্বক তো একটু বেশিই সংবেদনশীল। তাই সহজেই শীতের রুক্ষ পরিবেশ শিশুর ত্বক শুষ্ক করে তুলতে পারে। আর শুষ্কতা দূর করে ত্বককে নরম এবং কোমল রাখতে চাইলে তার ত্বকে নিয়মিত ভাল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুর ত্বকের জন্য তৈরি এমন কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ভারী কম্বল ব্যবহার করবেন না
কনকনে শীতে আপনার মনে হতেই পারে আপনার শিশুকে উষ্ণ রাখতে ভারী কম্বল খুব উপকারী । তবে এ ধারনা একদমই ঠিক নয়। যদি শিশুকে উষ্ণ রাখার জন্য ভারী কম্বল ব্যবহার করেন তবে সে তার হাত পা ঠিকভাবে নাড়াচাড়া করতে পারবেনা। এবং এটি করার চেষ্টা করার সময়, সে কম্বলটি নিজের মুখের উপরে টানতে পারে, যা এসআইডিএসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে। আপনার শিশুর জন্য হালকা কম্বল ব্যবহার করুন এবং ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখুন।
খেয়াল রাখুন
শীতে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় ইত্যাদি। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালি থাকার কারণে মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এই সময়টায় অভিভাবকদের অনেকটা সচেতন থাকতে হবে যাতে শিশু এসব রোগে আক্রান্ত হতে না পারে। শিশুদের বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য এসময় শিশুদের বাইরে খুব বেশি না বের করাই ভালো, বিশেষ করে খুব সকাল বা রাতের দিকে। যতটা সম্ভব জনসমাগমপূর্ণ এড়িয়ে চলুন। শিশুদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা রাখুন ।
নিয়ম করে গোসল করান
শীতে শিশুদের গোসল এর ব্যাপার নিয়ে অনেকেই নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। অনেকে আবার একধরনের ভয়েই থাকনে ছোট্ট শিশুর গোসল নিয়ে। এসময় একাধারে প্রত্যেকদিন নয় বরং বিরতি দিয়ে দিয়ে গোসল করানো উচিত। হালকা গরম পানি ব্যবহার করে শিশুকে গোসল করাবেন। গোসল শেষে শিশুকে একটি তোয়ালেতে জড়িয়ে নিন এবং ভালোভাবে মুছে চটপট পোশাক পড়িয়ে ফেলুন। আর যেদিন খুব বেশি ঠাণ্ডা আবহাওয়া থাকবে সেদিন কোনোমতেই গোসল করানো উচিত নয়। কিন্তু একনাগাড়ে অনেক দিন গোসল না করিয়ে রাখবেন না।
খাবার
শীতের সময়টা শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে তাদের শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাদের ঘনঘন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ এবং ফলের রস খাওয়ানো উচিত। বিশেষ করে গাজর, বিট, টমেটো শিশুদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। শিশুরা এ সময় যেন কোনো ধরনের ঠাণ্ডা খাবার না খায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ