সে ঘরের জানালা দিয়ে আমাকে দেখছে। আমিও তাকে দেখে দেখে উঠোনে পায়চারি করছি। স্বল্প দূরত্ব। দূরত্বটা বিষয় নয়। একে অন্যের দিকে তাকানোটাই বিষয়। অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা। হাসিটাই তার প্রমাণ। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম পাওয়া। গতকালই এসেছে সে আমাদের বাড়ি। বিকেলে। বউ হয়ে। আমার বউ। তার মুখের দিকে তাকিয়ে একবার হাসলে মনে হয় পৃথিবীর সব সুখ আমার। আর কিছু প্রয়োজন নেই। আজ সকালে সে আমার চোখে চোখে। গতকাল ছিল অনেক দূরে। হাঁটতে হাঁটতে উঠোনের একপ্রান্তে একটি সদ্য অঙ্কুরোদগম হওয়া পেঁপের চারা চোখে পড়ল। মনে হয় সেও গতকাল এসেছে, মানে জন্মেছে। দেখে মনে হলো কতটা সাহস আর অধিকার নিয়ে এসেছে, এ পৃথিবীতে আপন মনে বেড়ে ওঠার কী দারুণ আগ্রহ! সে আমার উঠোনের নতুন অতিথি। আর ঘরে! সেও আমার প্রাণের, তবে অতিথি নয়। এ সময় এই দুটোকেই আগলে রাখতে হয়- ‘ভালোবাসার পর্যাপ্ত পরিচর্যায়।’
পেঁপে গাছের চারা দ্রুত বর্ধনশীল। লাফিয়ে বড় হয়। দেখতে দেখতে ডালপালা ছড়িয়ে বেশ ডাঙর। আমার পায়চারির রুটিন। প্রতিদিন দুবার। সমানভাবে দুদিকেই চোখ রাখি। বউ আর চারা গাছ। একবার লাবণ্যময় বউয়ের সুস্নিগ্ধ মিষ্টি হাসি দেখি, অন্যদিকে সবুজ সতেজ পেঁপে গাছটাকে। বউ বলল, ‘এই যে মশাই, গাছটাকে বেড়া দাও, ছাগলে খেয়ে ফেলতে পারে। মনে হয় ভালো জাতের এটা, ফলন ভালোই হবে।’
বললাম, ‘ঠিক আছে, তোমার মতো এটাকেও নিবিড় যত্ন করা দরকার। ভালোবাসা চায়। পেঁপে গাছের চারাকে আদর করলাম কিছুক্ষণ। গাছের ভাব দেখে মনে হয় সে ভীষণ খুশি। পাতাগুলো হালকা বাতাসে দুলছে। বউ মুখ টিপে হাসল।’
আজ প্রথমবার নিয়ম ভঙ্গ হলো। বিকেলে নয়, সন্ধ্যায় হাঁটছি। থেকে থেকে পেঁপে গাছটার দিকে তাকাই। আবছা অন্ধকারে ঢেকে আছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়েছিল। ভেজা পাতা বাতাসে দুলছে। যেন টপ টপ করে কান্না ঝরছে। পিছনের জানালায় আজ জাসরিয়া নেই। জানালাটা খোলা এবং ফাঁকা। ঝাপসা অন্ধকার। আজ সারা দিন অজোরে ঝরেছে। সাথে আমিও। জাসরিয়া এই জানালায় আর কোনোদিন বসবে না। সে চলে গেছে জীবনের সব বন্ধন ছিঁড়ে। পেঁপে গাছটা দীর্ঘ হচ্ছে। জাসরিয়ার না থাকা দিনের হিসেবও।