বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যারা বলছেন অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখেছেন, এবারের নির্বাচনে আমাদের দেখুন, মানুষ তাদের ১৯৭১ সালে দেখেছে। কীভাবে তারা লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে।
গতকাল বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সভায় তারেক রহমান আরও বলেন, ‘কিছু কিছু মানুষ বা কোনো কোনো গোষ্ঠীকে ইদানীং বলতে শুনেছি বা বিভিন্ন জায়গায় কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে যে অমুককে দেখলাম, তমুককে দেখলাম, এবার অমুককে দেখুন। যাদের কথা বলে অমুককে দেখুন, তাদেরকে তো দেশের মানুষ ১৯৭১ সালেই দেখেছে। তাদের নতুন করে আর দেখার কিছুই নেই। ’৭১-এ কোনো কোনো গোষ্ঠী নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল। শুধু মানুষ হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা কীভাবে মা-বোনদের ইজ্জত পর্যন্ত লুট করেছিল, এই কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, এ দেশকে স্বাধীন করার জন্য লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। সেই দেশকে গড়তেও কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করতে হবে।
যে কোনো মূল্যে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করবে বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারলে দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন অরাজকতা বিরাজ করছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমি প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বলে আসছি, আমাদের সামনে সময়গুলো কিন্তু খুব ভালো নয়। সামনে অনেক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে এ দেশের জনগণ। এই ষড়যন্ত্র দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দিতে পারে বিএনপি। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং গণতন্ত্র।’ তারেক রহমান বলেন, দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হলে পরিকল্পনা থাকতে হবে। বিভিন্ন সময়ে দেশ যখন সংকটের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, তখন বিএনপি ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি করেছে। বিএনপি সরকারে গেলে পরিবর্তন হবে। তবে বিএনপি দেশকে মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকা বানাতে চায় না। স্বনির্ভর বাংলাদেশ বানাতে চায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচার যেভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে, একটি দল এখন একইভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেই দলের দুজন বিএনপির আমলে মন্ত্রী ছিলেন। তাঁরা সিনিয়র মানুষ, তাঁরা গত হয়েছেন। কাজেই যে মানুষ নেই তাঁদের সম্পর্কে অবশ্যই খারাপ কথা বলা উচিত নয়। তাঁদের প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান রেখেই বলতে চাই, এই দুজন ব্যক্তির বিএনপির সরকারে শেষ দিন পর্যন্ত থাকা প্রমাণ করে দেয় তাঁদের পূর্ণ কনফিডেন্স ছিল সেই খালেদা জিয়ার ওপরে, যে খালেদা জিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। সেজন্যই তাঁরা শেষ দিন পর্যন্ত সেই (চারদলীয় জোট) সরকারের সঙ্গে ছিলেন।’
রাজনীতির ময়দানে বেহেশতের টিকিট দেওয়ার আশ্বাস প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘যে জিনিসের মালিক আমি বা তুমি কেউ না। তার কমিটমেন্ট কি আমরা দিতে পারি? যা আমাদের সাধ্যের বাইরে। এখানে আমরা মুসলমান আছি। অন্য ধর্মের মানুষ এখানে উপস্থিত আছে। আমরা শুনেছি, কিছু রাজনৈতিক দলের, কিছু ব্যক্তি বা বেশ কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন জিনিসের (জান্নাতের) টিকিট বিক্রি করে বেড়াচ্ছে, (বেহেশতের) কনফার্মেশন দিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেক মুরুব্বি ব্যক্তি আছেন, বুজুর্গ ব্যক্তি আছেন এটি ধর্মীয় বিষয়।’ তারেক রহমান বলেন, ‘দোজখ, বেহেশত দুনিয়ার সবকিছুর মালিক আল্লাহ। যেটার মালিক আল্লাহ। যেটার কথা একমাত্র আল্লাহতাআলাই বলতে পারেন। সেখানে যদি আমি কিছু বলতে চাই, আমার নরমাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বুঝি যে সেটি হচ্ছে শিরক। সেটি শিরকের পর্যায়ে পড়ে।’ এ সময় তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদেরকে ঘরে ঘরে যেতে হবে এবং বলতে হবে যারা এসব কথা বলে তারা শিরক করছে। আপনি যদি তাদের কথা শুনেন, আপনিও শিরকের পর্যায়ে পড়ে যাবেন। এই কথাগুলো দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।