বাংলা সিনেমার অত্যন্ত জনপ্রিয় গান ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলা নেব সখী তোমার কানের সোনা, সখীগো ও, আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি, তোমার কাছে পয়সা নেব না’। সিনেমটির শিরোনাম ‘সুজন সখী’। ১৯৭৫ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান এই সাদা-কালো প্রেমের সিনেমাটি নির্মাণ করেন। চলতি বছর এই দর্শকনন্দিত সিনেমাটি মুক্তির ৫০ বছর পূর্ণ করল।
শোনা যায়, সিনেমাটি নির্মাণ করতে নির্মাতা খান আতা তার রিভলবার পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সিনেমার প্রচারে খুব একটা খরচ করতে পারেননি। পরে অবশ্য সিনেমা মুক্তির পর তার সব দুঃখ ঘুচে যায়। মানে ‘সুজন সখী’ দেখার জন্য সিনেমা হলগুলোতে উপচে পড়েছিল দর্শক। শুধু চট্টগ্রামের ‘খুরশিদ মহল’ সিনেমা হলে দর্শকের অনুরোধে এটি টানা তিন মাস প্রদর্শিত হয়ে রেকর্ড গড়েছিল। সিনেমাটি হয়েছিল বাম্পারহিট। সিনেমা সংশ্লিষ্টদের অনেকের মতে, মুক্তির পর সিনেমাটি আয় করেছিল কোটি টাকার বেশি। যার নির্মাণব্যয় ছিল মাত্র ৫ লাখ টাকা। পর্দায় গ্রামের দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব ও তাদের সন্তানদের প্রেম সহজ-সরল ও হৃদয়স্পর্শীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে দেশের প্রথম জাতীয় পুরস্কারে তিনটি শাখায় পুরস্কৃত হয় ‘সুজন-সখী’। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে খান আতাউর রহমান এবং প্লেব্যাক কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আবদুল আলিম ও সাবিনা ইয়াসমিন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১০ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি জনতা প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মাণ করে প্রমোদকার গোষ্ঠী। ‘সুজন-সখী’ সিনেমায় সুজনের ভূমিকায় ফারুক ও সখীর চরিত্রে কবরী অভিনয় করেন। এ ছাড়া আরও ছিলেন আনোয়ার হোসেন, খান আতা, সুলতানা জামান, রওশন জামিল, মিনু রহমান, টেলি সামাদ, ইনাম আহমেদ প্রমুখ।
এর কাহিনি ও সংলাপ লিখেছেন আমজাদ হোসেন এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক খান আতা নিজেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে একসময় এই কালজয়ী সিনেমাটির প্রিন্ট হারিয়ে যায় এবং মুক্তির ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর ‘সুজন সখী’র প্রিন্ট উদ্ধার করে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। এই সিনেমার সাদাকালো ৩৫ মিমি একটি প্রিন্ট উদ্ধার করা সম্ভব হয় আর্কাইভের মাধ্যমে। ফিল্ম আর্কাইভের চলচ্চিত্র সংগ্রাহক মোহাম্মদ ফখরুল আলম সোহাগ এর সন্ধান পান রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা খান আতাউর রহমানের অফিস স্টাফ দেলোয়ারের বাসায়। ২০১৭ সালের ১১ জুন এই প্রিন্টটি উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ জানায়, ১৯৯০-৯১ সালের দিকে সাদাকালো ছবি সিনেমা হলে কম চলায় খান আতাউর রহমানের ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার সৌমেন বাবু ছবিটি বিক্রি করে দেন প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দিনের কাছে। তাঁর কাছ থেকে ছবিটির একটি মাত্র কপি বেটাকম ক্যাসেটে কিনে রাখেন মধুমিতা মুভিজের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। আরেকটি প্রিন্ট ছিল দেলোয়ারের কাছে। এটিই এখন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষিত রয়েছে।