অবৈধ পথে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় আবারও ঘটল মর্মান্তিক নৌকাডুবি। ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারালেন অন্তত ১৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী। গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের দক্ষিণে গত শনিবার স্থানীয় সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুটি মরদেহ সাগর থেকে জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ২ জন। নিহতদের জাতীয়তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
গ্রিক কোস্টগার্ড জানায়, চ্রিসি দ্বীপের প্রায় ১৬–২৬ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে একটি ফুলে ওঠা রাবারের নৌকাকে ডুবে যেতে দেখে নিকটবর্তী একটি কার্গো জাহাজ জরুরি বার্তা পাঠায়। খবর পেয়ে দ্রুত অভিযানে যোগ দেয় কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজ, ফ্রন্টেক্সের একটি টহল নৌযান, একটি হেলিকপ্টার এবং তিনটি বাণিজ্যিক জাহাজ। পরে সাগর থেকে ১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জীবিত দুজনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
কোস্টগার্ডের ধারণা, নৌকার যাত্রীরা দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে ভাসমান ছিলেন। ফলে উপশীতলতা, পানিশূন্যতা ও অবসাদে অনেকের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। নৌকাটি কোথা থেকে ছেড়েছিল, কতজন ছিলেন বা নিহতদের পরিচয়—এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নৌকাটি উত্তর আফ্রিকার কোনো দেশ থেকে ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিল।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওয়া ও পানিতে ঢেউয়ের কারণে নৌকাটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। তাদের কাছে খাবার ও পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল। ক্রিটের ইরাপেত্রা বন্দরনগরের মেয়র মানোলিস ফ্রাঙ্গৌলিস জানান, নিহত সবাই তরুণ বয়সী। নৌকার দুই পাশ ফাটা থাকায় যাত্রীরা খুব সংকীর্ণ জায়গায় গাদাগাদি অবস্থায় আটকে ছিলেন।
গ্রিসের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ইআরটি জানিয়েছে, অধিকাংশ অভিবাসীর মৃত্যু ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার কারণে হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে প্রবেশের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা থামছে না। গত এক বছর ধরে লিবিয়া থেকে ক্রিট দ্বীপ হয়ে ইউরোপ যাওয়ার নতুন রুট ব্যবহার করছেন অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীরা। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৭৭০ জন আশ্রয়প্রার্থী গ্রিসে প্রবেশ করেছেন।
এদিকে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসের সরকার গত জুলাইয়ে লিবিয়া থেকে ক্রিটে পৌঁছানো অভিবাসীদের আশ্রয়ের আবেদন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতনের পর থেকে চলমান অস্থিতিশীলতা এই পথকে আরও বিপদসংকুল করে তুলেছে।
বিডি-প্রতিদিন/সুজন