ফ্রি অব চার্জ (এফওসি) সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির কোটা প্রত্যাহার সংক্রান্ত সরকারের এক সিদ্ধান্তের কারণে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে পোশাক খাতের দুই শিল্প। বিজিএমইএ জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ রপ্তানি আয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ওই দাবি নাকচ করে দিয়ে দেশের বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিটিএমএ বলছে, কাঁচামাল আমদানির কোটা তুলে দেওয়ার ফলে দেশীয় সুতা, কাপড় ও এক্সেসরিজের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে যাবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে। এ খাতের প্রায় ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উভয় পক্ষের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইআইটি) শিবির বিচিত্র বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাঁচামাল আমদানির শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনায় আগামীকাল (সোমবার) সভা হবে। ওই সভায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে। প্রচলিত আমদানিনীতি অনুযায়ী তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা তাদের আগের বছরের রপ্তানি আয়ের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যের কাঁচামাল (কাপড়, ট্রিমস, এক্সেসরিজ) এফওসি সুবিধায় আমদানি করতে পারেন। বিজিএমইএর সুপারিশে সম্প্রতি এ কোটা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা সংগঠন বিজিএমইএ। সম্প্রতি বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এফওসি কোটার সীমা তুলে দিলে প্রথম বছরেই অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হতে পারে। দ্বিতীয় বছরে এই আয় ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কারণ তখন কারখানাগুলো এফওসি ব্যবস্থায় শতভাগ কাঁচামাল পাবে। তবে কাঁচামাল আমদানিতে কোটা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দেশীয় বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের মধ্যে। গত ২৯ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিটিএমএ বলেছে, এফওসি কোটা তুলে দিলে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় সুতা, কাপড় ও এক্সেসরিজের চাহিদা কমে যাবে। স্থানীয় মূল্য সংযোজন কমার ফলে ঝুঁকিতে পড়বে ২৩ বিলিয়ন ডলারের স্থানীয় বিনিয়োগ।
বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্শ্ববর্তী চীন, ভারত যেখানে তৈরি পোশাক খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প উন্নত করে আয় ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে- সেখানে দেশে একটি শ্রেণি আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়ে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে দিতে চাইছে। বস্ত্র খাতের এই উদ্যোক্তা বলেন, এফওসি কোটায় কাঁচামাল আমদানি কোটা তুলে দিলে-দেশে শুধু সেলাইয়ের খরচ পাবেন রপ্তানিকারকরা। সব এক্সেসরিজ বিদেশ থেকে আসবে। এতে আমদানিকারকরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও দেশের বস্ত্র খাতের সামগ্রিক আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মূল্য সংযোজন হার কমে যাবে।
শুধু তাই নয়, কাঁচামাল আমদানির কোটা প্রত্যাহারে আরও অসুবিধা দেখছেন বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, রপ্তানি আদেশের বিপরীতে অবাধে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা তা স্থানীয় বাজারে ছেড়ে দিতে পারেন। এমনিতেই বন্ডেড সুবিধার আওতায় কাঁচামাল এনে অবাধে ইসলামপুর বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমদানি উন্মুক্ত হলে দেশের বাজার বিদেশি কাপড়ে সয়লাব হয়ে যাবে। এতে বস্ত্রশিল্পে ধস নামবে। বন্ধ হয়ে যাবে দেশীয় মিলগুলো, যা কর্মসংস্থানে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।