‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি, চির-কল্যাণকর। অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ নজরুলের এই অমর পঙ্ক্তি সন্দেহাতীত সত্য। অবিতর্কিত এবং সেজন্যই যুগে যুগে বহুল উচ্চারিত। এর আবেদন হয়তো হাজার বছরেও ম্লান হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বললেন, দেশে আজকের নারী জুলাই বিপ্লব ও গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী নারী সমাজ। বিপ্লবে তারা সামনের কাতারে ছিলেন। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। তারা শুধু নারীদের জন্যই নয়, সবার জন্যই অনুপ্রেরণা। নারীদের সামনে রেখেই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও মানবিক মর্যাদা সমুন্নত এবং দুর্নীতি, দুঃশাসন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার নারী শিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার ও নারী জাগরণে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চার নারীকে রোকেয়া পদক প্রদান অনুষ্ঠানে, সমাজে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বেগম রোকেয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১০০ বছর পেরিয়ে এসেও, দেশে আরেকজন রোকেয়া সৃষ্টি হয়নি। এটা জাতির ব্যর্থতা, দুর্ভাগ্য। হয়নি তার কারণ, আমরা শুধু স্মরণে শেষ করেছি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। তার নীতি আদর্শ, প্রচেষ্টা স্বপ্ন ধারণও করিনি, বাস্তবায়নেও সক্রিয় হইনি। তাই বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। তার দিকনির্দেশনা প্রাত্যহিক চর্চায় নিইনি। কথা বলেছি, কিন্তু এগোতে পারিনি। এখন এসব অপূর্ণতা, অনার্জনের কারণ খোঁজা উচিত। মূলত, বেগম রোকেয়া যখন বাংলাদেশের নারীদের শিক্ষা, স্বকীয়তা, স্বাবলম্বনের কথা বলেছেন, তখন অলীক স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার মতো শোনালেও- তা ছিল রোকেয়ার বিপ্লব। শতবর্ষের পরিক্রমার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটাই ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও, সে যাত্রা এখনো মোক্ষলাভ করেনি। যেতে হবে আরও বহুদূর। এখনো সমাজ অনেক ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রায় সীমারেখা টেনে দিতে চায়। এখনো তারা বাঁকা কথার শিকার হয়। এ কূপমণ্ডূকতা ভাঙতে হবে- পরিবার থেকে; সমাজে, প্রশাসনে, সংস্কারে। পাঠকক্ষ থেকে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা, সমানাধিকার ও নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে রাষ্ট্রীয় আইনে। বাংলাদেশের নারী মহাকাশ অভিযানে যাবে সে সক্ষমতা অর্জন মোটেই দূরের স্বপ্ন নয়। দ্রুতই পূরণ হোক তা। আর দেশের নারী সমাজ আদর্শ মা হিসেবে-সত্য ন্যায়ের শিক্ষায় বেড়ে ওঠা একটা আদর্শ প্রজন্ম গড়ে তুলুন; যেটা এখন দেশের জন্য বেশি জরুরি।