‘আল্লাহুম্মা ছল্লি ওয়াসাল্লিম ওয়া বারিক আলা সাইয়্যেদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাইন, ক্বালা রসুলুল্লাহি সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আছছিদকু ইউনজি ওয়াল কিজবু ইউহলিক।’
এ হাদিসটি আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিস। ইমাম বায়হাকি (রহ.) তাঁর সুনানে কুবরার মধ্যে হাদিসখানা উল্লেখ করেছেন। এই হাদিসের মধ্যে রসুলে পাক (সা.) এই দিকনির্দেশনা করেছেন যে কোন বস্তু মানুষকে নাজাত বা মুক্তি প্রদান করে, আর কোন বস্তু মানুষকে হালাক বা ধ্বংস করে দেয়। মুক্তি বা নাজাতের চিন্তা করা এটা মানুষের স্বভাবগত বিষয়। যে তা না করে সে বোকা! রসুলে পাক (সা.)-এর ইন্তেকালের পর একদিন ওমর (রা.) ওসমান গনি (রা.)-এর সামনে দিয়ে অতিক্রমকালে ওসমান গনি (রা.)কে সালাম দিলেন। ওসমান গনি (রা.) সালামের জবাব দেননি। সালাম দেওয়া সুন্নত আর সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। আগে সালাম দিলে সওয়াব বেশি। জবাব দিলে সওয়াব কম। সালাম দিয়ে সুন্নত পালন করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। আর জবাব দিয়ে ওয়াজিব পালন করলে সওয়াব কম। সুতরাং বোঝা গেল বড় কাজ করলেই বড় হওয়া যায় না। ছোট কাজ করেও বড়ত্ব অর্জন করা যায়। আসল কথা হলো মনের ব্যাপার। যাই হোক সালামের জবাব না দেওয়া এটা একটা অপরাধ। তাই ওসমান (রা.) সালামের জবাব না দেওয়ার কারণে ওমর (রা.) আবু বকর (রা.)-এর কাছে অভিযোগ করলেন। তখন খলিফা ছিলেন আবু বকর (রা.)। হজরত ওমর (রা.)-এর মতো ব্যক্তিত্ব খলিফার দরবারে বিচার নিয়ে গেছেন সালামের জবাব না দেওয়ার অভিযোগে। আজকে যদি কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কোনো অফিসের বস বা কর্মকর্তার কাছে যায় এবং বলে, স্যার আমি অমুককে সালাম দিয়েছি, সে সালামের জবাব দেয়নি। তাহলে তাকে পাগল ছাড়া কিছু বলবে?
বলবে, মিয়া! অভিযোগ করার আর কোনো বিষয় পেলে না? আর যদি কেউ প্রেসিডেন্টের কাছে যায় এই অভিযোগ নিয়ে, তাহলে? যাই হোক আমিরুল মুমিনিন আবু বকর (রা.) ওসমানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ শুনে চিন্তা করলেন, তিনি তো এমন লোক নন। যার কাছে নবী করিম (সা.) স্বীয় দুই কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন এবং এ-ও বলেছেন, যদি আমার একশত মেয়ে থাকত, আর একেকজন মারা যেত, তাহলে একে একে সবাইকে আমি ওসমানের কাছে বিয়ে দিতাম। তা ছাড়া নবী করিম (সা.) বলে গেছেন, আল্লাহতায়ালা আমাকে জানিয়েছেন ওসমান (রা.) জান্নাতি। সুতরাং এমন ব্যক্তি সালামের জবাব থেকে বিরত থাকে কীভাবে? বিষয়টির কারণ ও রহস্য জানতে আমিরুল মুমিনিন স্বয়ং বের হয়ে হেঁটে হজরত ওসমান (রা.)-এর বাড়িতে গেলেন। গিয়ে সালাম দিলেন।
আজকাল তো মানুষ এমনভাবে সালাম দেয় যে সালামের যা অর্থ ছিল, তা পরিবর্তন হয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ চলে আসে। বলে ‘সামালেকুম’ অর্থাৎ আপনি মরে যান। জবাবে বলে ওয়ালাইকুম, অর্থাৎ আপনিও মরে যান। সুতরাং আবু বকর (রা.) সালাম দিলেন ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’ ওসমান (রা.) বললেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’
আবু বকর (রা.) ওসমান (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ওমর আপনাকে সালাম দিয়েছিলেন, আপনি তাঁর সালামের জবাব দেননি কেন? ওসমান (রা.) বললেন, বলেন কী? ওমর (রা.) সালাম দেবেন আর সালামের জবাব দেব না-এটা কী করে সম্ভব? তিনি কখন সালাম দিয়েছেন তা তো আমি কিছুই বলতে পারছি না। আবু বকর (রা.) ফিরে এলেন। বললেন, আসল ঘটনা আমি বুঝতে পেরেছি। আসল ঘটনা হলো, নবী করিম (সা.)-এর ওফাতের ফলে ওসমানের অবস্থা এমন হয়েছে যে তাঁর সামনে দিয়ে কে যায় কে আসে এবং কে সালাম দেয় আর কে কী বলে এসবের ব্যাপারে তাঁর কোনো অনুভূতিই নেই। এ প্রসঙ্গে হজরত ওসমান (রা.) স্বয়ং বলেন, আমাকে ক্ষমা করবেন! নবী করিম (সা.)-এর ইন্তেকালের ফলে আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। কারণ আমি নবী করিম (সা.)-কে একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তাই আমি খুবই পেরেশান ছিলাম। আবু বকর (রা.) বললেন, সেই প্রশ্নটা কী? ওসমান (রা.) বললেন, প্রশ্নটা হলো, রসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর জাতির মুক্তির কী ব্যবস্থা হবে?
যে যেমন তাঁর চিন্তাভাবনাও তেমন। তিনি নিজের ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন না। যেহেতু তিনি আগামী দিনে আমিরুল মুমিনিন হবেন, তাই চিন্তাভাবনাও ঠিক সে পর্যায়ের। যাই হোক আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তা শুনে বললেন, আমি এই প্রশ্ন রসুল (সা.)কে করেছি এবং তিনি এর উত্তর দিয়ে গেছেন। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আমিও রসুল (সা.)কে তা জিজ্ঞেস করেছি তিনি আমাকেও এর উত্তর দিয়ে গেছেন। মায়াজ (রা.) বলেন, আমাকেও রসুল (সা.) এর উত্তর দিয়ে গেছেন। আনাস (রা.) বলেন, আমাকেও রসুল (সা.) এর উত্তর প্রদান করে গেছেন। ওসমান (রা.) বললেন, আমি ধন্য হে আবু বকর (রা.) আপনিই খলিফা হওয়ার উপযুক্ত। নবী করিম (সা.)-এর অবর্তমানে আপনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার অধিক যোগ্য।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ