আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে ডিজিএফআইয়ের জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৪ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউর তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম ও শাইখ মাহদী। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাহিন এম রহমান, মাসুদ সালাউদ্দিন ও আমির হোসেন।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউর বলেন, গ্রেপ্তারকৃত তিন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। অভিযোগ গঠনের শুনানির সময়, অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের সুযোগই আইনে নেই। তিন সেনা কর্মকর্তার পক্ষে আইনজীবী দুলু বলেন, এই আসামিদের বিরুদ্ধে আটক, অপহরণ, আয়নাঘরে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। ডিজিএফআইয়ের ৯টি ব্যুরোর মধ্যে কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো-সিটিআইবি অন্যতম।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী যখন বন্দি হন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী তখন সিটিআইবির পরিচালক ছিলেন না। এ সময় প্রসিকিউশনের প্রধান আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, উনি বলছেন, ওই সময় আসামি ওই পদে ছিলেন না। আমি বলেছি, ছিলেন। এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ট্রায়াল (বিচার) প্রয়োজন। সেই সময় এখন নয়। এখন আসামিপক্ষের আবেদন পড়তে গেলে সারা দিনেও শেষ হবে না। উনি তো ট্রাইব্যুনাল আইনটাই বোঝেননি। অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় প্রাইমাফেসি (অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা) দেখতে হবে। মামলার এ পর্যায়ে পুরো সাক্ষ্য, ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করার সুযোগ নেই। আইনজীবী দুলু গুম অভিযোগের জবাবে বলেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আযমী গুম অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে এ ঘটনায় ১১ জনকে দায়ী করে সেনাবাহিনীর কাছে একটি অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেনা আইনে গঠিত তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আটজনকে দায়ী করে শাস্তি দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা প্রসিকিউশনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগে সেই আটজনের মধ্যে ছয়জন আসামি হলেও দুজনকে আসামি করা হয়নি। এর মানে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ অসম্পূর্ণ।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, তদন্ত আদালতের রিপোর্ট মানা বাধ্যতামূলক নয়। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আর্মির রিপোর্ট মানা বাধ্যতামূলক না। আর্মি তো তাদের বাঁচানোরও চেষ্টা করতে পারে। তদন্ত আদালতের যে ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে আসামিপক্ষের আইনজীবী কথা বলছেন, সেটি আদালতে হাজির করা হয়নি। এর ভিত্তিতে তিনি কথা বলেন কীভাবে? আইনজীবী দুলু বলেন, যারা আযমীর গুম চলমান রেখেছেন, সেই রিপোর্টে তাদের নাম আছে; আমার মক্কেলের নাম নেই।
এদিকে মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শুনানি করেন। গ্রেপ্তারকৃত তিন সেনা কমকর্তা মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজহার সিদ্দিকীকে শুনানির সময় কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। শুনানিতে তাদের আইনজীবীরাও নিজের মক্কেলকে নির্দোষ দাবি করেন।