আদলত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানকে। তার নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এই অব্যাহতির আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্যের জেরে গত ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ৩০ নভেম্বর সেই আবেদনে শুনানির পর ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিন তাকে তলব করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনজীবী সনদ নিয়ে গতকাল সোমবার তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়। সেই নির্দেশে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন ফজলুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামাল ও গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের সামনে তুলে ধরেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম। আর ফজলুর রহমানের পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। তখন ট্রাইব্যুনাল ফজলুর রহমানকে জিজ্ঞেস করেন, কাইন্ডলি আপনি বলবেন, এই কথা (এই ট্রাইব্যুনাল আমি মানি না) বলেছেন কিনা? জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, মাই লর্ড, আমি এইভাবে বলি নাই। তখন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ট্রাইব্যুনালের ওপর ফজলুর রহমানের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। এ ধরনের মন্তব্যের জন্য তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান। তিনি সত্যিই এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত।
তখন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, উনাকে তো আমরা চিনি। তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের ফ্যামিলিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। রাতে রুম ছেড়ে দিয়েছি। রাতে খাইয়েছি (মুক্তিযোদ্ধাদের)। কোন ব্রিজ ভাঙতে হবে, বলে দিয়েছি। আপনাদের (মুক্তিযোদ্ধা) অবস্থান সুপিরিয়র (সবার উপরে)। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে সহজে আনবেন না। জুডিশিয়ারিকে (বিচার বিভাগকে) আপনারা গাইড করবেন।
এ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ বলেন, গত ১৫ বছর দেখেছি, আপনি কত অন্যায় আর অবিচারের শিকার। হঠাৎ কেন এমন ইউটার্ন (বাঁক বদল)! তখন ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আমার বয়স ৭৮ বছর। জীবনে কখনো এমন কিছু বলিনি। এই কথা এমন হবে বুঝতে পারিনি। আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। হয়তো আমার স্লিপ অব টাং হয়ে যেতে পারে। আমিও মানুষ। আমার জীবনে আর এরকম হয় নাই। আমি ক্ষমা চাই।
এ সময় ট্রাইব্যুনালর চেয়ারম্যান বলেন, আপনি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন। আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সিনিয়র আইনজীবী। আপনার কাছে এ ধরনের বক্তব্য আশা করি না। আপনি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন। এ পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ফজলুর রহমানের পক্ষে বলেন, কোর্টকে ম্যালাইন (আদালতের সম্মান ক্ষুন্ন) করার জন্য এ রকমের কথা বলবেন, এটা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন। জুডিশিয়ারি যদি ফাংশন না করে, তাহলে তো দেশ বর্বর হয়ে যাবে। পরে ফজলুর রহমানের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, অল দ্য বেস্ট। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকেন।
পরে ট্রাইব্যুনালের আদেশ তুলে ধরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি যেহেতু তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, যে কথাগুলো বলেছেন, এগুলো বলা তার ঠিক হয়নি। সে কারণে আদালত তার ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন এবং আদালত অবমাননার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।