আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় বিএনপি নেতা মো. ফজলুর রহামনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এ রুল দেন। আদালত অবমাননার দায়ে কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সেই সঙ্গে আগামী ৮ ডিসেম্বর ফজলুর রহমানকে তার প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনজীবী সনদ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে সশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। শুনানির শুরুতেই ফজলুর রহমানের পরিচয় জানতে চান ট্রাইব্যুনাল। তখন প্রসিকিউটর তামীম তার রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী, সে পরিচয়ও দেন তামীম। একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘উনি কি অ্যাডভোকেট নাকি? ওকালতির সার্টিফিকেট আছে? কোর্ট-কাচারিতে আসছেন কোনো দিন। এলে এমন কথা কোনো দিনও বলতেন না। তখন প্রসিকিউটর তামিম বলেন, উনি (ফজলুর রহমান) সবসময় একটু বাড়িয়ে বলেন। উনি নাকি ৪৪ বছর ধরে আইন পেশায় রয়েছেন। কিন্তু আমরা ঘাঁটাঘাঁটি দেখেছি তিনি ১৯৯২ সাল থেকে প্র্যাকটিস করছেন। সে হিসাবে ৩৩ বছর। তখন ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তোলেন, উনি কি আসলেই প্র্যাকটিস করেন। প্র্যাকটিস করলে তো এমন কথা বলতে পারেন না। ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, আইনের সমালোচনা করা যাবে। রায়ের সমালোচনা করা যাবে। বিচারকেরও সমালোচনা করা যাবে।
কিন্তু রায় মানি না, এটা বলা শুধু আদালত অবমাননাই নয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতাও। এরপর ট্রাইব্যুনাল রুলসহ আদেশ দেন। পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, প্রসিকিউশন দুটি বিষয়ে আদালত অবমাননার আবেদন করেছে। একটি হচ্ছে, ফজলুর রহমান বলেছিলেন, তিনি এই আদালত মানেন না। আরেকটি হচ্ছে, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, একটি ইন্টারনাল অ্যারেজমেন্টের মাধ্যমে এই প্রসিডিংসটা (বিচার) চলছে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। কেন আদালত অবমাননার জন্য ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই রুল জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তাকে আগামী ৮ ডিসেম্বর সশরীর ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তার একাডেমিক, বার কাউন্সিল সনদসহ উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করে আসছিলেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে নিয়মিত কথা বলতে দেখা যায় তাকে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তাকে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছে। বীর মুক্তিযুদ্ধা ফজলুর রহমান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা।