বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম। পরে তিনি অভিযোগটি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন। আংশিক শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী রাবিবার ফের শুনানির জন্য রেখেছেন। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে পেনড্রাইভে করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোর ভিডিও দাখিল করা হয়েছে। ওই টকশোতে ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি প্রসিকিউশনের। ভিডিওটি ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়।
গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ছিলেন না। যে কারণে প্রসিকিউশনের বক্তব্য শোনার পর সদস্য বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী বলেন, অভিযোগটি খুবই গুরুতর। এ বিষয়ে ট্রা বার শুনানি হবে।
পরে এ নিয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ব্রিফ করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী তামীম। মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মো. ফজলুর রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একজন প্রার্থী। তিনি গত ২৩ নভেম্বর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের একটি টকশোতে অংশগ্রহণ করে বলেন যে, ‘আমি শুরু থেকে বলছি, এখনো বলছি, যদি না বলে থাকি তাহলে ভুল বলেছি, সেটা হচ্ছে এই ট্রাইব্যুনালের জুরিসডিকশন (এখতিয়ার) আমি মানি না। উনি এটা রিপিট করেছেন এই ট্রাইব্যুনালের জুরিসডিকশন আমি মানি না, এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে না।’
মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘শুধুমাত্র শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া নয়, উনি এই ট্রাইব্যুনালের সব বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মানেন না বলে অবজ্ঞা করেছেন, অবহেলা করেছেন, অডাসিটি (ধৃষ্টতা) দেখিয়েছেন।’
আদালত অবমাননা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ১১(৪) তুলে ধরে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল কোনো আবেদনের ভিত্তিতে অথবা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কারণ দর্শানো সুযোগ দিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। আদালত অবমাননার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দুটোই দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল।’
এরপর প্রসিকিউটর তামীম টকশোতে ফজলুর রহমানের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি আরও অনেক ডিফেমেটরি (মানহানিকর) বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা শুধু কোর্ট নিয়ে উনি যতটুকু কথা বলেছেন, সেটুকু ট্রাইব্যুনালের সামনে পড়েছি। মোট ৪৯ মিনিটের টকশোটা আমরা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছি।’
জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করে আসছিলেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য।