বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই দেশের অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে সংঘাতের জেরে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে বাধ্য হয়েছেন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দুই প্রতিবেশী দেশের ৫ লাখেরও বেশি মানুষ। গতকাল দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুরাসান্ত কংসিরি রাজধানী ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম-শহরগুলো থেকে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে উঠেছেন। সেনা ও পুলিশ বাহিনী এ ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করছে। আমরা নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। একই দিন কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যালি সোচিয়েতা জানান, দেশের পাঁচটি প্রদেশ থেকে মোট ১ লাখ ১ হাজার ২২৯ জন নাগরিককে নিরাপদ সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ নামের একটি ভূখণ্ড নিয়ে ১১৮ বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমানা মিলিত হয়েছে পান্না ত্রিভুজে। প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনাসমৃদ্ধ পান্না ত্রিভুজকে থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া উভয়েই নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে। এই সংকটের সূত্রপাত গত শতকের প্রথম দশকে। সে সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল কম্বোডিয়া। ১৯০৭ সালে কম্বোডিয়ার একটি মানচিত্র প্রকাশ করে ফ্রান্স, সেখানে পান্না ত্রিভুজকে কম্বোডীয় ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ও প্রদর্শন করা হয়। সেই সময়েই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল থাইল্যান্ড। ১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হয় কম্বোডিয়া। কিন্তু স্বাধীনতার পরও পান্না ত্রিভুজকে নিজেদের দখলে রাখে দেশটির সরকার। ফলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি দেশটির। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সীমান্ত সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে যুদ্ধবিরতিতে গিয়েছিল দুই দেশ। কিন্তু গত বছর মে মাস থেকে উত্তেজনা শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে। এই উত্তেজনার জের ধরে গত জুলাই মাসের শেষ দিকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে থাই ও কম্বোডীয় সেনাবাহিনী। সেই সংঘাতে নিহত হয়েছিলেন দুই দেশের ৪৮ জন নাগরিক এবং বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন ৩ লাখ মানুষ। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। এরপর চার মাসেরও বেশি সময় শান্ত থাকার পর গত রবিবার আবারও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেখা দেয়। -এএফপি