দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে নতুন করে ৭৩৪টি কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট যুক্ত হয়েছে। তবে অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বাড়লেও বিস্ময়করভাবে এসব অ্যাকাউন্টে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ কমেছে। আলোচ্য তিন মাসে কোটিপতি এসব অ্যাকাউন্ট থেকে আমানত কমেছে ৫৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০টিতে। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৭৩৪টি।
মূলত বিভিন্ন ব্যাংকের আর্থিক অনিয়মের তথ্য ফাঁস, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বড় অঙ্কের ব্যক্তি আমানতকারীদের (অতি ধনীদের ব্যাংক হিসাব) আচরণে এমন পরিবর্তন বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অতি ধনীদের ব্যাংক থেকে সরে যাওয়া বড় ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। কারণ বড় অঙ্কের আমানতই ব্যাংকের শক্তিশালী তারল্য ভিত্তি তৈরি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা মোট অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬। আর সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার ৭০। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৭৩৪টি।
চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকের চেয়েও জুন প্রান্তিকে বেড়েছিল কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা। মার্চ শেষে ছিল এক লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি। আর জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬। সেই হিসাবে মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ হাজার ৯৭৪টি।
এদিকে কোটি টাকা অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জুন শেষে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টে জমা করা টাকার পরিমাণ ছিল আট লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি। আর সেপ্টেম্বর শেষে এসব অ্যাকাউন্টে জমা করা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে এসব অ্যাকাউন্টে জমা কমেছে ৫৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কামাল