তামাক সেবন ও উৎপাদনের কারণে বাংলাদেশে ২০২৪ সালে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ তামাক খাত থেকে সরকারের আদায় করা করের দ্বিগুণেরও বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক নতুন গবেষণায় এ উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে পিপিআরসি কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে ‘টোব্যাকো কস্ট অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট’ শীর্ষক এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বক্তব্য দেন পিপিআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
এ গবেষণায় দেখা যায়, ২০২৪ সালে তামাক খাত থেকে সরকার প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও এর বিপরীতে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। গবেষণায় প্রথমবারের মতো তামাকের পরিবেশগত ক্ষতির দিকটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বন উজাড়, জমির ক্ষয়, বর্জ্যব্যবস্থাপনা এবং দূষণসহ পরিবেশের ওপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের আর্থিক মূল্য ১৪৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন টাকা (১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা), যা মোট ক্ষতির ১৬ শতাংশ।
গবেষকরা ও নীতিনির্ধারকরা প্রায়ই এই পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি উপেক্ষা করে কেবল স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ের ওপর মনোযোগ দেন।
গবেষকরা ‘কস্ট-অব-ইলনেস’ পদ্ধতি ব্যবহার করে আটটি প্রধান তামাকজনিত রোগের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক ক্ষতি নিরূপণ করেছেন, যার পরিমাণ ৭৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি তামাকজনিত অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এবং অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে হিসাব করা হয়েছে।
হোসেন জিল্লুর রহমান শক্তিশালী আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বিচারভিত্তিক অ্যাডভোকেসি জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন। একই সঙ্গে তামাক চাষে কৃষকের নির্ভরতা কমাতে বিকল্প ফসল উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি পরিমাপে বার্ষিক অডিট চালুর পরামর্শ দেন।
গবেষণার তথ্যমতে, দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন, যা পরিবার, সরকারি সম্পদ এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে। এতে বলা হয়, বিদ্যালয়ের ১০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ভাসমান তামাক বিক্রেতাদের অবাধ চলাচল রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের তামাকজাত পণ্যের সহজলভ্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে গবেষকরা সিগারেটের খুচরা বা একক শলাকা বিক্রি বন্ধের জোরালো দাবি জানিয়েছেন।