রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে বারনই নদী। নগরীর হাসপাতাল-ক্লিনিক, শিল্পকারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত তরল বর্জ্য ড্রেনেজ ও খাল দিয়ে সরাসরি নদীতে যাওয়ায় দূষণ চরমে পৌঁছেছে। এতে তিন উপজেলার প্রায় ১ লাখ মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
এ পরিস্থিতিতে বারনই নদী রক্ষায় ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটির উদ্বোধন উপলক্ষে ডিসেম্বরেই পরিবেশ উপদেষ্টা রাজশাহী আসবেন বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার আ ন ম বজলুর রশীদ। রাজশাহীর পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়ারুল ইসলাম জানান, বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হয়েছে বারনই নদী। পারের মানুষ নদীতে গোসল, গৃহস্থালি এবং কৃষিকাজে ব্যবহার করে আক্রান্ত হচ্ছে দাদ, শুকনো চুলকানি, পাঁচড়া, স্ক্যাবিস, ফাঙাশ, চর্মদল, জকইচসহ নানান ধরনের চর্মরোগে। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার পুঠিয়াপাড়া মহল্লার অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত। ইতোমধ্যে দুজনের মৃত্যুও হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, রাহুল আলী নামের এক শিশুর কপাল, গলা ও হাত-পাসহ পুরো শরীরে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। সে এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। পবা সদরের বাসিন্দা মোস্তফা সরকার বলেন, বারনই নদীর সঙ্গে সংযুক্ত শিব নদে এক মাস আগে গোসল করেছিলাম। এরপর আমি ফাঙাশ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন রাজশাহী কমিটির সভাপতি জামাত খান বলেন, সিটি করপোরেশনের বর্জ্য পবা, মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলার ১ লাখের বেশি মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ নিয়ে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেটির কিছু সংশোধনী চেয়েছে মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ কাজ করছে। রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তাছমিনা খাতুন জানান, একটি সমন্বিত প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস আই এম রাজিউল করিম বলেন, নদীর পানি ব্যবহার এবং মাছ খাওয়ার কারণে মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।