পানির অভাবে ধুঁকছে তিস্তা। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুকনো মৌসুম ধরা হয়। এরই মধ্যে তিস্তা পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা সেচ প্রকল্পে প্রতি বছরই পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ব্যারাজ ও আশপাশের অঞ্চল ঝুঁকির মুখে পড়ে। কোটি কোটি টন পলি এসে নদী ভরাট করে ফেলে। শুকনো মৌসুমে তিস্তা নদী চেনা যায় না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৬ হাজার কিউসেকের মতো। এখন প্রতিদিনই পানি কমছে। জানুয়ারি মাসে শুরু হবে সেচ মৌসুম। সেই সময় নদীতে পানির প্রয়োজন কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার কিউসেক। সে সময় পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। পানির অভাবে সেচকমান্ড এলাকায় পুরোপুরি সেচ দেওয়া সম্ভব হয় না। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন দুই লাখ কিউসেকের বেশি পানি ছেড়ে নদীর দুই কূল ভাসিয়ে দেয় ভারত। এই অবস্থা যুগ যুগ ধরে চলে এলেও এর প্রতিকারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সেচ প্রকল্প সম্পর্কে জানা গেছে, ডালিয়ায় তিস্তা নদীর পানি সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দুই দেশের এই প্রকল্প আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই অঞ্চলে প্রথম সম্ভাবনা যাচাই সমীক্ষা হয় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৬৯-৭০ সময়কালে সমাপ্ত হয়। পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিকে সেচ চাষের আওতায় আনার সিন্ধান্ত নেওয়া হলেও পানি প্রবাহ ঠিক না থাকায় প্রতি মৌসুমে পানি নিয়ে হাহাকার উঠে।
তিস্তা ভারতের জলপাইগুড়িতে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তিস্তা বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ছাতনাই গ্রামের মাইল খানেক উত্তর দিয়ে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে প্রায় ১১৬ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে তিস্তা কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যমুনার সঙ্গে গিয়ে মিশেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, নভেম্বর থেকে শুকনো মৌসুম ধরা হয়। এ সময় নদীতে পানি সাধারণত কম থাকে।