পাহাড়ে এখন পাখির মেলা। শুধু দেশিও নয়, বিদেশি পাখিদের আগমন বেড়েছে চোখে পড়ার মত। রং-বেরংয়ের নানা প্রজাতির পাখি শীত প্রধান দেশে থেকে ছুটে আসছে পাহাড়ে। কাপ্তাই হ্রদ আর পাহাড়ের জোপঝাড়- সবখানে তাদের কিচিরমিচির ডাকাডাকি। রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের ডুবোচরে এসব পাখির আস্তানা। দল বেঁধে হ্রদের মাছ শিকারে ব্যস্ত এসব পাখির দল। ভোর হলে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলে দেখা যায় পাখির বিরল মেলা। কখনো এরা হ্রদের বুকে ডুবসাঁতার, আবার কখনো ঝাঁক বেঁধে আকাশের নীলে ওড়াওড়ি। এ যেনো ওদের নিত্য দিনের রুটিন। সন্ধ্যার আকাশে গোধূলির রং ছড়ালে শুরু হয় পাখির মিছিল।
কিচির-মিচির ছন্দের তালে সারি বেঁধে তখন ফিরে যায় পাহাড়, বন ও বাঁশঝাড়ে। এমন বিস্ময়কর সৌন্দর্য এখন শুধু পাহাড়ে দৃশ্যমান।
রাঙামাটির হ্রদ-পাহাড় ঘুরে দেখা গেছে, সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে পাহাড়ে এসেছে ফ্লাইফেচার, জলকুট, পর্চাড, জলপিপি, পাতারী, গার্নিগি, পাস্তামুখী, নর্দানপিন্টেলসহ নানা প্রজাতির পাখি। অতিথি পাখির সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশীয় সরালি, ডাহুক, পানকৌরি, বক, বালিহাঁসসহ নাম না জানা হাজারো প্রজাতির পাখি।
শুধু রাঙামাটি শহর এলাকা নয়, অতিথি পাখির দেখা মিলছে জেলার সুবলং, লংগদু, কাট্টলী, মাইনিমুখ, সাজেক, বাঘাইছড়ি, হরিণা, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলাগুলোতে। অতিথি পাখির কলতানে কানায় কানায় ভরপুর হ্রদের তীর ও জলে ভাসা চর।
স্থানীয় মাহমুদুল হাসান বলেন, খুব ভোর বেলা আর সন্ধ্যায় কাপ্তাই হ্রদে দেখা মেলে পাতিহাস, ডাহোক, কালাম, বক, ছোট সরালি, বড় সরালি, টিকি হাঁস, মাথা মোটা টিটি, চোখাচোখি, গাঙচিল, গাঙ কবুতর, চ্যাগা ও জলমোরগ, বইধর। এটা শুধু শীত কালে সম্ভব এ সুন্দর সব পাখি দেখা। আমাদের ভালো লাগে যখন দেখি অতিথি হিসেবে এসেছে কোন মানুষ নয়, শুধু পাখি। আর পাখি।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর শুধু শীত মৌসুমের জন্য পার্বত্যাঞ্চলে বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি এলেও তাদের নিরাপত্তার জন্য নেই দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ। তাই সক্রিয় থাকে পাখি শিকারিরা।
রাঙামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ জানান, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল ও হিমালয়ের উত্তরে শীত ও তুষারপাত শুরু হলে অতিথি পাখিরা বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। দেশের হাতে গোনা যে কয়েকটি এলাকায় এরা ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়ে, তার মধ্যে অন্যতম পার্বত্যাঞ্চল।
তাই পাখিদের সুরক্ষায় আমরা সজাগ। পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতেও সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। যাতে কেউ পাখি শিকার না করে। পাখি শিকার আইনত অপরাধ। কেউ এ অপরাধ করলে বন্য প্রাণী সুরক্ষা আইনে তাদের শাস্তি পেতে হবে। পাখি নিধনের প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল