বাগানের মাল্টাগুলো গত নভেম্বরে হলুদ হতে শুরু করেছে। এখন যেন হলুদের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে গাছের সবুজ পাতা। আর এই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন। ফেরার সময় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বড় আকারের মাল্টা।
দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে ব্যস্ত সময় কাটছে বাগানমালিক হানিফ আলী মন্ডলের (৩৪)। হানিফ বলছেন, ‘এমন অবস্থা যাচ্ছে, অনেক সময় খাবার খেতে বাড়িও যেতে পারি না। তবে মানুষজনকে বাগান দেখাতে, কথা বলতে খুব ভালো লাগছে।’
হানিফের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আমেদুল মন্ডল। হানিফ রাজশাহী কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। ২০১৯ সালে বাড়ির পাশেই ১৬ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘হানিফ মন্ডল অ্যাগ্রো ফার্ম’। ফার্মটি এখন পর্যন্ত মাল্টার জন্যই পরিচিতি পেয়েছে।
তবে বিভিন্ন প্রজাতির মাল্টা ছাড়াও চায়নিজ কমলা, বারোমাসি কতবেল, পেয়ারা, আনার ফল, বারোমাসি আমড়া, আমের বাগান রয়েছে। পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে রবিশস্যও আবাদ হচ্ছে। মাল্টা আছে ৪ বাঘায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এখান থেকে মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলগাছের চারা নিচ্ছেন কৃষক ও নতুন উদ্যোক্তারা।
রাজশাহী শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ফতেপুর গ্রামে হানিফের অ্যাগ্রো ফার্ম। গত শুক্রবার বিকেলে সেখানে গিয়ে হানিফ আলীকে পাওয়া গেল। তিনি জানালেন, ভোরে শহর থেকে ব্যবসায়ীরা মাল্টা কিনতে এসেছিলেন। বাগান ঘুরিয়ে দেখালেন। আর বললেন কীভাবে বাগানটি গড়ে তুললেন।
হানিফ জানান, তার বাবা আগে থেকেই ফলের বাগান করেন। তিনি পেয়ারা ও আমের বাগান করতেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতেও তাঁদের পেয়ারার বড় বাগান আছে। ছোটবেলা থেকেই গাছগাছালির প্রতি একটা ভালো লাগা তৈরি হয়। আর অনেক বাগান দেখেছেন তিনি। বাবার বাগান দেখভাল করতে গিয়ে মাস্টার্স আর করা হয়নি। নিজের মধ্যে থাকা স্বপ্ন থেকে এই বাগান গড়ে তুলেছেন।
তার ইচ্ছা, তার ফার্মে সব ধরনের ফলের চাষ করবেন। পাশাপাশি অন্যদেরও এখান থেকে চারা বানিয়ে দেবেন। ইতিমধ্যে সেই কাজ করছেনও তিনি। তিনি আরও বলেন, মাল্টা চাষে খুব বেশি খরচ হয় না। ২০১৯ সালে তিনি ৯ বিঘা জমি ইজারা নেন। পরে আরও ৭ বিঘা ইজারা নিয়েছেন। তখন ৯ বিঘায় পেয়ারার বাগান ছিল। পেয়ারাবাগানের ভেতরে তিনি মাল্টাগাছ রোপণ করেছিলেন। কয়েক বছর পেয়ারার ফলন পেয়ে তিনি পেয়ারাগাছ কেটে ফেলেন। তিন বছর ধরে তার মাল্টাগাছে ভালো ফলন আসছে। সবশেষ তিন বছর ধরে তিনি সর্বোচ্চ ফলন পাচ্ছেন।
বাগান ঘুরতে আসা নাবিল জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে এখানে এসেছেন। খুবই পছন্দ হয়ে বাগানটি। কোনো কেমিক্যাল ছাড়া মাল্টা কিনতে পেরে খুশি তিনি।
কলেজ শিক্ষক আবদুস সামাদ জানালেন, হানিফের সঙ্গে পরিচয়ের সুত্র ধরে বাগানটি দেখতে এসেছেন। এমন বাগান আগে কখনো দেখেননি। পেরে খেতে পারছেন, দেশের বাইরে এমন বাগানের কথা শুনেছেন, এবার নিজের চোখে দেখলেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ