১৬ ডিসেম্বর, বাঙালি জাতির এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই দিনে পৃথিবীর বুকে উদয় হয়েছিল এক নতুন মানচিত্র, নাম বাংলাদেশ। বিজয়ের এই মহানন্দ প্রতি বছর আমরা উদযাপন করি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও উৎসবের আমেজে। আর এই উৎসবের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতিফলন দেখা যায় আমাদের পোশাকে, যেখানে পতাকার লাল এবং সবুজ রং হয়ে ওঠে দেশাত্মবোধের প্রতীক।
দেশীয় ফ্যাশনে স্বদেশমুখী চেতনা
দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বরাবরই নতুন প্রজন্মকে পোশাকের মাধ্যমে স্বদেশমুখী করে তুলেছে। তাদের ডিজাইনের একটি বড় অংশজুড়ে থাকে দেশাত্মবোধের চেতনা, যা বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ফ্যাশনে স্পষ্টভাবে উন্মোচিত হয়। এই বিশেষ দিবসগুলোর ফ্যাশন প্রবাহ অন্যান্য উৎসবকেন্দ্রিক ফ্যাশন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এবারের বিজয় দিবসেও দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউসগুলো যেমন অঞ্জন’স, বিশ্বরঙ, কে ক্র্যাফট, রঙ বাংলাদেশ, নিত্যউপহার, নিপুণ, বাংলার মেলা- বিভিন্ন প্রজন্মের ফ্যাশন সচেতনদের জন্য আউটলেট সাজিয়েছে মনোহর পসরায়। এই হাউসগুলো কেবল ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ থেকেই বিজয়ের বিশেষ আয়োজন করে থাকে। লাল-সবুজ আমাদের পতাকার রং, আমাদের বিজয়ের প্রতীক; তাই পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়ে এই রং দুটিকেই কেন্দ্র করে তাদের সব আয়োজন।
নকশায় লাল-সবুজ
বিজয় দিবসের পোশাকে প্রধানত লাল ও সবুজ রং প্রাধান্য পায়। জাতীয় পতাকার রংকে তুলির আঁচড়ে নান্দনিকভাবে পোশাকের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়। শীতকাল হওয়ায় কাপড়ে কিছুটা ভিন্নতা আনা হয়েছে; ব্যবহার করা হয়েছে মোটা সুতি ও খাদি কাপড়, যা শীতে বেশ মানানসই।
পোশাকে বৈচিত্র্য
♦ নারীদের জন্য : শাড়ি, থ্রি-পিস, কুর্তা, টপস, ফ্রক।
♦ পুরুষদের জন্য : পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট।
♦ শিশু-কিশোরদের জন্য : পাঞ্জাবি, ফ্রক, টি-শার্ট, সালোয়ার কামিজ।
ডিজাইনে ‘বাংলাদেশ’ লেখা এবং লাল-সবুজের রঙের মাধ্যমে দেশীয় ভাবনা উঠে এসেছে। এছাড়াও, দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান ডিজাইনের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পোশাকগুলোতে কাজের মাধ্যম হিসেবে টাইডাই, ব্লক, বাটিক, অ্যাপলিক, ক্যাটওয়াক এবং স্ক্রিন প্রিন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পোশাকে এনেছে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও দেশীয় চেতনার ছোঁয়া। বড় কথা, এসব পোশাক ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।

তরুণ প্রজন্মের সাজ-পোশাক
বিজয়ের আনন্দ উদযাপন ও জাতীয় চেতনাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে দিবসভিত্তিক পোশাক পরিধান এখন অন্যতম একটি মাধ্যম। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা সাজ-পোশাকের মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করে।
নারীদের সাজসজ্জা
♦ শাড়ি : বাঙালিয়ানা মানেই শাড়ি। বিজয় দিবসে নারীরা মূলত তাঁতের শাড়ি, টাঙ্গাইল ও জামদানি শাড়ি বেছে নেন। লাল কিংবা সবুজ অথবা দুটি রঙের মিশ্রণে তৈরি শাড়ি বেশি প্রাধান্য পায়।
♦ অন্যান্য পোশাক : যারা শাড়ি পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, তারা সালোয়ার-কামিজ, লম্বা কুর্তা, টপস, ফতুয়া জিন্সের সঙ্গে লাল-সবুজ শাল কিংবা সিঙ্গেল ওড়না পরে নিতে পারেন।
♦ গহনা : শাড়ির সঙ্গে লাল-সবুজ রেশমি কাচের চুড়ি অথবা বিডস, পার্ল ও মেটালের গয়না দিবসভিত্তিক সাজপোশাকে বেশ মানিয়ে যায়।
বিজয় দিবসের সাজসজ্জা পূর্ণতা পায় মেকআপ ও কেশসজ্জায়। শীতকাল হওয়ায় সাজ নষ্ট হওয়ার ভয় কম, তাই শাড়ির সঙ্গে ভারী ‘সাজ’ ভালো মানায়। ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ত্বক নরম করে লিক্যুইড ফাউন্ডেশন ও ফেস পাউডার লাগিয়ে বেইজ মেকআপ শেষ করুন। এরপর পিচ বা গোলাপি ব্লাশন বুলিয়ে নিন। চোখে পানিরোধক কাজল, মাশকারা ও আইলাইনার ব্যবহার করুন। ঠোঁটে গোলাপি, ব্রাউন, লাল বা কমলা রঙের শেড বেছে নিতে পারেন। শাড়ির পাড়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে টিপ পরুন। আর চুলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিংয়ে পর খোলা ওয়েভ কার্ল বা স্পাইরাল করে নিন। শাড়ি পরলে হাত খোঁপা করে তাতে লাল গোলাপ বা চুলের কাঁটা গুঁজে নিলে ভালো লাগবে। যারা চুল আটকে রাখতে চান তারা বেণি বা পনিটেল করুন।