বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বসে এক অদ্ভুত বাজি ধরেছিলেন কার্ল বুশবি। তিনি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে হেঁটে ইংল্যান্ডে ফিরে আসবেন। তবে তখন তিনি ছিলেন মাত্র ২০ বছর বয়সী তরুণ। বুশবি বলেন, ‘হঠাৎ বিষয়টা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল। হিসাব-নিকাশ করে দেখলাম, কাজটা সম্ভব।’
কয়েক বছরের প্রস্তুতির পর ১৯৯৮ সালে চিলির পান্তা অ্যারেনাস থেকে যাত্রা শুরু। তার শহর হাল পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজার মাইল পথ। ভেবেছিলেন ১২ বছরে পৌঁছাবেন, কিন্তু ২৭ বছর কেটে গেছে—এখনও হাঁটছেন তিনি। এই দীর্ঘ পথে পেরেছেন পাতাগোনিয়া, আন্দিজ, মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া ও এশিয়ার অংশ। মরুভূমি, জঙ্গল, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা—সবই পেরোতে হয়েছে পায়ে হেঁটে।
শুরুতেই দুই কঠিন নিয়ম ঠিক করেছিলেন: কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না এবং গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যাওয়া যাবে না। ভরসা ছিল কেবল কাগজের মানচিত্র, পেনসিল ও ক্যালকুলেটর। এই অভিযানকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘গলিয়াৎ এক্সপিডিশন’।
বুশবি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্যারাট্রুপার ছিলেন। সেনাবাহিনীতে ফিটনেস, সহনশীলতা এবং দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার শিক্ষা পেয়েছিলেন। জীবন ও মৃত্যুর চিন্তা তাকে আরও দৃঢ় করেছে। ২৯ বছর বয়সে মাত্র ৫০০ ডলার নিয়ে তিনি বিশ্বভ্রমণে বের হন। শুরুতে রাত কাটাতেন রাস্তার পাশে তাঁবু টাঙিয়ে, ক্ষুধা মেটাতেন রাস্তার পাশ থেকে খাবার কুড়িয়ে।
ক্রমে সাহায্য এসেছে পরিবার, সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন কোম্পানি থেকে। ২০০৩ সালে কানাডায় পৌঁছে অভিজ্ঞতা নিয়ে বই প্রকাশের চুক্তি হয়, পরবর্তীতে সিনেমা নির্মাণের আগ্রহও দেখা দেয়। বুশবি বলেন, ‘রাস্তায় হয়তো আমি একাই হাঁটছি, কিন্তু আমার পেছনে বিশাল এক সমর্থন কাজ করছে।’
পথের বাধা ছিল দারুণ চ্যালেঞ্জিং। পানামা ও কলম্বিয়ার ডারিয়েন গ্যাপ পেরোনোর সাহসিকতা, আলাস্কা ও রাশিয়ার বেরিং প্রণালি পার হওয়ার ঝুঁকি, ভুল সীমান্তে আটক, স্পনসরদের সরে দাঁড়ানো, রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞাও পার করেছেন তিনি ধৈর্য ও জেদ দিয়ে। ২০২৪ সালে কাস্পিয়ান সাগরও সাঁতরে পেরিয়েছেন—৩১ দিন ধরে, রাত কাটিয়েছেন সহায়তাকারী নৌকায়।
আজ হাল শহর থেকে মাত্র ৯৩২ মাইল দূরে। বয়স বেড়েছে, হাঁটার গতি কমেছে, দিনে এখন ১৫ মাইল। ২৫টি দেশ পেরিয়ে পায়ের অবস্থা এখনো চমৎকার। বুশবি বলেন, ‘পায়ের যত্ন আসলে পা নিজেই নেয়।’
প্রায় তিন দশক ধরে অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ হলেও সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা ও সহায়তায়। অসুস্থতা, বিপদ—সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন অচেনা মানুষ। বুশবি বলেন, ‘পৃথিবীর ৯৯.৯৯% মানুষ চমৎকার। স্বপ্ন পূরণের পথে পৃথিবী আপনাকে সাহায্য করবে।’
এখন বাড়ি ফিরে তিনি বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চান, তবে মানুষের ভালোবাসাই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তরুণদের উদ্দেশে বুশবি বলেন, ‘পৃথিবী আপনাকে আগলে রাখবে, স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে আর সামনে এগিয়ে নেবে। এই অভিজ্ঞতা সত্যিই বিস্ময়কর।’
তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল