সকল গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে ৩ দলের সমন্বয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে নতুন নির্বাচনি জোটের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এ সময় তিনি বলেন, দখলদারিত্ব ও ধর্মের মাধ্যমে ভোট আদায়কারীদের পতন শিগগিরই ঘটবে। আমরা দেখেছি, নির্বাচনি সংস্কৃতিতে ভোট কেন্দ্র দখল, জবরদস্তি ও আধিপত্যবাদী এবং ফ্যাসিবাদী আচরণ করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সেই আচরণ শুরু হয়ে গিয়েছে।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনায় থাকা নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ এই জোটে না এলেও জোটের বাকি দুই দল হলো- আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ তিন দলের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার রক্ষা এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণে আগ্রহী দলগুলোর সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে। শিগগিরই তারা আমাদের জোটে যুক্ত হতে হবে। এই জোট কেবল নির্বাচনি জোট নয়, রাজনৈতিক জোট। গণ-অভ্যুত্থানকে বাঁচিয়ে রাখতে এই জোট কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক জোট বলছি এই কারণে যে, বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছর লড়াইটা কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য হয়েছিল। ফলে নির্বাচন কেবল ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য হবে না। এই নির্বাচনটাকে আমরা রাজনৈতিক নির্বাচনে পরিণত করতে চাই। দেশ বদলের জন্য, সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য এবং অর্থনৈতিক মুক্তির যাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
ঐক্যমত কমিশনে সংস্কার বাধাগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি ঐক্যমত কমিশনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নানান শক্তি নানাভাবেই সংস্কারের বিরোধিতা করেছে এবং বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা যারা সংস্কারের পক্ষে, পরিবর্তনের পক্ষে এবং গণঅভ্যুত্থানকে সফল করার জন্যে কাজ করে আসছি তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের এই ঐক্য প্রক্রিয়া আজকে শুরু হয়েছে এবং এটা চলমান থাকবে। আমরা বাংলাদেশকে পুরাতন রাজনীতির পথে আর ফেরত যেতে দিব না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশ এবং আগের বাংলাদেশ এক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি বিভিন্ন দলকে সিটের লোভ দেখিয়ে নানা জোটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দল থেকে যেসব প্রস্তাব আসছে সেগুলাকে আমরা সাদরে প্রত্যাখ্যান করি। আমরা মনে করি যারা সংস্কারের পক্ষে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম এবং মর্যাদাবান রাষ্ট্র করার পক্ষে লড়াই করেছে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা মনে করি বাংলাদেশে যে তারুণ্যের শক্তি, পরিবর্তনের শক্তির উত্থান ঘটেছে জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জোট থেকে ৩শ আসনে নির্বাচন করা হবে কিনা জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ৩শ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করবো। কবে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে তা পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জোটের মুখপাত্রের নাম ঘোষণা করে বলেন, ‘আজ থেকে এই জোটটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তরুণদের নেতা নাহিদ ইসলাম।’
তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্র করবার জন্য। খুব একটা সফলতা না এলেও আজ থেকে আমরা এক নতুন যাত্রায় নামছি। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ প্রত্যাশা অনুযায়ী এবং জুলাই অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটা নতুন রাজনৈতিক দিশা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। যারা আমাদের এই যাত্রার সঙ্গী হতে চান তাদের স্বাগত জানাই।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে সেই সংস্কার পূর্ণাঙ্গভাবে নির্ধারিত হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে। কেবল জোটের এই তিনটি সংগঠনই বাংলাদেশের সংস্কারের পক্ষের শক্তি নয়। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি যারা করেন তারা প্রত্যেকে এই সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে।’
বিডি-প্রতিদিন/জামশেদ